সিএইচটি নিউজ বাংলা, ২০ জানুয়ারি ২০১৩,
রবিবার
রাঙামাটি পুলিশ সুপারকে দিয়ে কল্পনা চাকমা
অপহরণ ঘটনার পুনঃতদন্ত প্রত্যাখ্যান করে চিহ্নিত অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও বিচার
বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাত সংগঠন আজ ২০ জানুয়ারি রবিবার রাঙামাটি
জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।
কল্পনা চাকমা অপহরণ বিষয়ে ষোল বছর পর পুলিশের
অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দাখিল করা চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্টের উপর গত ১৩ ও ১৬ জানুয়ারি
দু'দফা শুনানী শেষে রাঙামাটি মুখ্য বিচারিক হাকিম মো: সিরাজুদ্দৌল্লাহ
কুতুবী পুলিশ সুপারকে(এসপি)দিয়ে কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার পুনঃতদন্তের আদেশ দেন। এ আদেশ প্রত্যাখ্যান
করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাত সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, সাজেক নারী সমাজ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক
স্কোয়াড এই সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেয়। আদালতের দেয়া আদেশ প্রত্যাখ্যান করে এর আগে সংগঠনগুলো পার্বত্য
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছিল।
অবরোধ চলাকালে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার
বেতবুনিয়ায় সকালের দিকে পুলিশ পিকেটারদের উপর হামলা চালিয়ে তিনজন পিকেটারকে আটকের চেষ্টা
চালায়। এছাড়া আর বড় ধরনের কোন ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ পালিত
হয়েছে।
অবরোধের কারণে রাঙামাটি জেলার সদর ও উপজেলাগুলোতে
দূরপাল্লার ও আভ্যন্তরীণ সড়কে কোন যান চলাচল করেনি এবং কোন নৌযানও ছেড়ে যায়নি।
পার্বত্য সাত সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অবরোধ সফল
করায় সকল যান মালিক সমিতি,
শ্রমিক সংগঠন ও সর্বস্তরের জনগণকে ধন্যবাদ
জানিয়ে বলেন, কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও বিচার আজ শুধু
কল্পনা চাকমার ভাইদের বা তাদের পারিবারের দাবি নয়। এ দাবি সকল নিগৃহীত
নারীর দাবি তথা পাহাড়ি-বাঙালি-সান্তাল-গারো-মুনিপুরী বলতে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ
সারা দেশের অধিকার বঞ্চিত সংখ্যালঘু জাতি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার
সাথে যুক্ত। কল্পনা অপহরণ একটি জাতীয় ইস্যু। কল্পনা অপহরণকারীদের
গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান গোটা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেরই অংশ।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, কল্পনার অপহরণকারীগণ চিহ্নিত হওয়ার পরও তাদের গ্রেফতার না করে
সরকার অহেতুক কালক্ষেপণের মাধ্যমে অপহরণকারীদের রক্ষার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। দীর্ঘ ষোল বছর ধরে
তদন্ত চালিয়েও যে পুলিশ কল্পনা অপহরণের বিষয়ে কোন কূল কিনারা করতে পারেনি আবারো পুলিশ
সুপারকে দিয়ে তদন্ত করা অপরাধীদের রক্ষার চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। এভাবে তদন্তের নামে
দীর্ঘসূত্রীতা ও তালবাহানার কোন মানে হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিবাদী জনগণ আর তদন্তের নামে কানামাছি
খেলা দেখতে প্রস্তুত নয়, তারা চিহ্নিত অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দেখতে চায়।
সাত সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে কল্পনা চাকমার
চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস,
নুরুল হক ও সালেহ আহম্মদ সহ ঘটনার সাথে জড়িত
সকল অপরাধীদের গ্রেফতার ও শাস্তি এবং নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, হিল উইমেন্স ফেডারেশন
নেত্রী কল্পনা চাকমা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন (১১ জুন মধ্যরাত) রাঙামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন
নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে কজইছড়ি ক্যাম্পের তৎকালীন কমান্ডার লেঃ ফেরদৌস
ও তার সশস্ত্র সহযোগীদের দ্বারা অপহৃত হন। ২০১০ সালের ২১ মে বাঘাইছড়ি থানার তৎকালীন এস আই ফারুক আহম্মদ
চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। রিপোর্টে তিনি অপহরণকারীদের সনাক্ত করতে ও কল্পনা চাকমার অবস্থান
সম্পর্কে ধারণা দিতে ব্যর্থ হন। মামলার বাদী কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা এই রিপোর্টের
বিরুদ্ধে নারাজী আবেদন জানালে আদালত সিআইডি দ্বারা তদন্ত করানোর নির্দেশ দেন।
এরপর ২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পুলিশের অপরাধ
তদন্ত বিভাগের(সিআইডি) কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল্লাহ কল্পনা চাকমার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি
এবং ভবিষ্যতেও উদ্ধারের কোন লণ দেখা যাচ্ছে না বলে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সিআইডির দাখিল করা উক্ত রিপোর্টের উপর গত
১৩ ও ১৬ জানুয়ারি দু'দফা শুনানী শেষে রাঙামাটি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের অতিরিক্ত
চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট মো: সিরাজুদ্দৌল্লাহ কুতুবী পুলিশ সুপারকে(এসপি) দিয়ে কল্পনা
চাকমা অপহরণ ঘটনার পুনঃ তদন্তের আদেশ দেন।