শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১১

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ৩য় কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রশাসনের বাধা: নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত

আজ ১ এপ্রিল, শুক্রবার, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের তৃতীয় কেন্দ্রীয় কাউন্সিল বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশ ও প্রশাসনের বাধার কারণে তা হতে পারেনি প্রায় আড়াই মাস আগে হল বুকিং, প্রশাসনকে যথারীতি অবহিতকরণ ও অন্যান্য প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পরও শেষ বেলায় এসে "অনুমতি" না থাকার মিথ্যা অজুহাতে প্রশাসন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে দেয়নি। গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নেতা মিঠুন চাকমা সরকারের এ অগণতান্ত্রিক আচরণের তীব্র সমালোচনা করে একে জঘন্য ষড়যন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন

সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে তিন পার্বত্য জেলা ও চট্টগ্রাম থেকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দুই সহস্রাধিক কর্মি, সমর্থক ও শুভাকাক্সখী যোগ প্রস্তুত ছিল এর মধ্যে গত রাতের মধ্যে নয় শত জন চট্টগ্রাম শহরে এসে জড়ো হয়৷ আজ সকালে তিন জেলা থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য আরো ৮ শত কর্মি সমর্থক রওনা দেয়, অনেকে সম্মেলন স্থলের কাছাকাছি পৌঁছেও যান তবে সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক বাধার কারণে অনুষ্ঠানে করা সম্ভব হবে না বিধায় তাদেরকে ফিরে যেতে বলা হয়

এরপর গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সম্মেলনের প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকদের নিয়ে এক সংক্ষিপ্ত কাউন্সিল অধিবেশনে মিলিত হন মিঠুন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে নতুন কুমার চাকমাকে সভাপতি, শান্তিদেব চাকমাকে সহসভাপতি, মাইকেল চাকামকে সাধারণ সম্পাদক ও জিকো মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয় পরে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের অন্যান্য কর্মি ও সমর্থকদের কাছে নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করা হলে তারাও তা বিপুল করতালির মাধ্যমে অনুমোদন করেন

সংক্ষিপ্ত কাউন্সিল অধিবেশনে বিদায়ী সভাপতি মিঠুন চাকমা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সম্মেলন বানচাল করার জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করেন এবং কোন ধরনের বাধা, ষড়যন্ত্র ও চোখ রাঙানি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমন করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ফায়দা হাসিল করতে চাইছে কিন্তু জনগণ তা কখানো হতে দেবেন না

সমপ্রতি সরকার ইউপিডিএফ-এর গণতান্ত্রিক কার্যক্রম দমনের জন্য যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে চরম অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিস্ট মানসিকতার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ অভিহিত করে মিঠুন চাকমা বলেন, ইউপিডিএফ-এর সাংগঠিক শক্তি বৃদ্ধি হলে তাতে সরকারের স্বার্থান্বেষী মহলের উদ্বিগ্ন হওয়ার মানে কী?

তিনি অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত এলাকা ঘোষণা, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার ও সেটলারদেরকে সমতলে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসনসহ ৭ দফা দাবি পূরণের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান

সম্মেলনে গৃহীত অন্যান্য দাবিগুলো হলো: ১৷ সংবিধানে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুরুং, খুমী, চাক, পাংকো, বমসহ দেশের সকল জাতি বা জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিতে হবে

২৷ পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের প্রথাগত যৌথ মালিকানার স্বীকৃতি দিতে হবে; ভূমি বেদখল বন্ধ করতে হবে এবং বেদখলকৃত জমি ফিরিয়ে দিতে হবে

৩৷ অপারেশন উত্তরণের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে বলবত্‍ সেনাশাসন তুলে নিয়ে পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে

৪৷ সাজেক, খাগড়াছড়ি ও লংগুদু হামলার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে; পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত্‍ সংঘটিত সকল গণহত্যার স্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে

৫৷ ভারত প্রত্যাগত ও আভ্যন্তরীণ শরণার্থীদের দ্রুত পুনর্বাসন করতে হবে

৬৷ ডিওয়াইএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর দমন পীড়ন বন্ধ করতে হবে; বেআইনীভাবে বন্ধ করে দেয়া ইউপিডিএফ-এর অফিস খুলে দিতে হবে; মাইকেল চাকমাসহ আটককৃত ডিওয়াইএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মুক্তি দিতে হবে

খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ

প্রশাসন বাধা দিয়ে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সম্মেলন বানচাল করে দেয়ার প্রতিবাদে বেলা ২:৩০টায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে তিন সংগঠনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখা সমুহের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের বাস টার্মিনাল থেকে শুরু হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে স্বনির্ভর বাজারে গিয়ে এক সমাবেশে মিলিত হয় এতে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুবীর চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ সভাপতি চন্দনী চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অংকন চাকমা

বক্তারা প্রশাসনের ধরনের অগণতান্ত্রিক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, উক্ত সম্মেলন বিষয়ে চট্টগ্রামের প্রশাসনকে অবহিত করার পরও কেন সম্মেলনে বাধা প্রদান করা হলো তা বোধগম্য নয়। সভা-সমাবেশ মিছিল-মিটিঙের মাধ্যমে মত প্রকাশের অধিকার একটি সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। কিন্তু প্রশাসন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সম্মেলনে বাধা দিয়ে চরম অগণতান্ত্রিক আচরণ করেছে। যা চরম ফ্যাসিস্ট আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।

বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ-এর নেতৃত্বে অধিকার আদায়ের যে আন্দোলন গড়ে উঠছে সেই আন্দোলনকে ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যে সরকার নানাভাবে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণকে অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখতে চাই লক্ষ্যে আজকের সম্মেলনে বাধা দেয়া হয়েছে।

বক্তারা অবিলম্বে ইউপিডিএফ তার সকল সহযোগী সংগঠন সমূহের উপর ফ্যাসিস্ট দমন-পীড়ন বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।