মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০১৪

দীঘিনালায় বিজিবি’র হামলায় নারীসহ ১৮ জন পাহাড়ি গ্রামবাসী আহত

সিএইচটি নিউজ বাংলা, ১০ জুন ২০১৪, মঙ্গলবার

দীঘিনালা: খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া এলাকার যত্নমোহন কার্বারী পাড়ায় বিজিবি’র হামলায় এক গ্রাম প্রধানসহ ১৮ জন পাহাড়ি গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। আহতরা অধিকাংশই নারী।  আহতদের দিঘীনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- ১. সংঘ দেবী চাকমা(৪৫) স্বামী সুরজয় চাকমা, গ্রাম- যত্ন মোহন কার্বারী পাড়া, ২. অপসরি চাকমা (১৬), পিতা সুখময় চাকমা, গ্রাম- মধ্য বাঘাইছড়ি, ৩. সুরভি চাকমা (৪০), স্বামী- শুক্রমোহন চাকমা, গ্রাম যত্ন মোহন কার্বারী পাড়া, ৪. ফুলরাণী চাকমা (৪৫) স্বামী- স্নেহ কুমার চাকমা, গ্রাম- ঐ, ৫. মধুরিকা চাকমা (৩০), পিতা-নোয়ারাম চামা, গ্রাম-মধ্য বাঘইছড়ি, ৬. আনন্দ বালা চাকমা (৫৫), স্বামী মৃত. কমল কুমার চাকমা, ৭. সন্তোষ কুমার কার্বারী (৭৫) পিতা মৃত শশী মোহন কার্বারী, গ্রাম শশী মোহন কার্বারী পাড়া, ৮. সোনাদেবী চাকমা(৪০), স্বামী- সুরজয় চাকমা, গ্রাম যত্ন মোহন কার্বারী পাড়া, ৯. কমলা রঞ্জন চাকমা (৩২), পিতা- সুরজয় চাকমা, গ্রাম-ঐ, ১০. চাহেলী চাকমা (২৫),স্বামী- কমলা রঞ্জন চাকমা, ১১. প্রদীপ চাকমা (৬৫), পিতা মৃত ভগবান চন্দ্র চাকমা, গ্রাম- ঐ, ১২. মায়া রাণী চাকমা(৫৫), স্বামী- প্রদীপ চাকমা, ১৩. সাধন দেবী চাকমা (৬০), স্বামী- মঙ্গল চাকমা, ১৪. সুরর্ণা চাকমা(২৬), স্বামী- শ্যামল চাকমা, গ্রাম যত্ন মোহন কার্বারী পাড়া, ১৫. শ্যামলিকা চাকমা (৩৫), স্বামী- বিনি মোহন চাকমা, গ্রাম-ঐ , ১৬. গোপা চাকমা(৪০), স্বামী- শুভময় চাকমা, ১৭. প্রেমদিনী চাকমা(৭০), স্বামী মৃত প্রিয় রঞ্জন চাকমা, গ্রাম- যত্ন মোহন কার্বারী পাড়া ও ঝর্ণা চাকমা (৩৫), স্বামী- ধর্মরতন চাকমা, গ্রাম-ঐ।
জানা যায়, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার সময় স্থানীয় গ্রামবাসীরা নিজেদের জায়গায় কলা গাছের চারা রোপন করতে গেলে বিজিবি সদস্যরা বাধা দেয়। এ সময় পাহাড়িরা প্রতিবাদ করলে বিজিবি সদস্যরা প্রথমে সেটলারদের দিয়ে হামলার চেষ্টা করে।  এ সময় উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে পরে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা নিজেরাই এলোপাথাড়িভাবে পাহাড়িদের উপর হামলা চালায়। তারা লাঠিসোটা ও বন্দুকের বাট দিয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষ মারধর করে। এ সময় পুলিশ পাহাড়িদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও গুলি ছোঁড়ে। এতে গ্রাম প্রধান সন্তোষ কুমার কার্বারী সহ ১৮ জন পাহাড়ি নারী-পুরুষ আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৪জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এরা হলেন, অপসরি চাকমা, ফুলরাণী চাকমা, মায়ারাণী চাকমা ও গোপা চাকমা। এ ঘটনায় এলাকার পাহাড়িদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী উক্ত জায়গায় বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনে বিরোধিতা করে আসছে। ২০০৫ সালে তারা হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জমিঅধিগ্রহণের জন্য জারিকৃত নোটিশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এই মর্মের সরকারের বিরুদ্ধে রুল জারি করে এবং এই রূল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উক্ত নোটিশের কার্যকারীতা স্থগিতের নির্দেশ দেয়।কিন্তু হাইকোর্টের এই রুল জারি থাকা অবস্থায়গত ১৪ মে গভীর রাতে গিয়ে বিজিবির ৫১নং ব্যাটালিয়নের সদস্যরা জোরপূর্বক পাহাড়িদের জায়গার উপর টাবু খাটিয়ে অবস্থান করছে।  এর প্রতিবাদে দীঘিনালা উপজেলার সর্বস্তরের জনতা মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট ও প্রধানমন্ত্রীর বরবারে পেশ করেছে।———–