সিএইচটি নিউজ বাংলা, ১৭ মে ২০১৩, শুক্রবার
আজ ১৭ মে ২০১৩ সকাল ১১.০০ ঘটিকায় ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর মিলনায়তনে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশের উপর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের দ্বিতীয় বার সার্বজনীন পুনর্বীক্ষণ পদ্ধতির (ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ) অধিবেশনে সরকারের বক্তব্যের উপর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ এসব অভিমত তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কাপেং ফাউন্ডেশনে উপদেষ্টা ও আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. ডালেম চন্দ্র বর্মন, আদিবাসী অধিকার কর্মী মঙ্গল কুমার চাকমা, কাপেং ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন চৈতালী ত্রিপুরা ও সমন্বয়কারী মংসিংঞো, মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন ও বিশিষ্ট সাংবাদিক সালিম সামাদ।
ড. ডালেম চন্দ্র বর্মন বলেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার কেবল একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। তিনি কেবল প্রতিশ্রুতিতে নয়, প্রকৃত বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ইউপিআরে সরকারের প্রতিশ্রুত বিষয়াবলী বাস্তবায়নে সহযোগি ভূমিকা পালনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও তিনি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য যে, গত ২৯ এপ্রিল ২০১৩ জেনেভায় অবস্থিত জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) এর আওতায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা হয়েছে। উক্ত প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও এনজিও-এর পক্ষ থেকে ২৭টি বিকল্প প্রতিবেদন পেশ করেছে। ‘কোয়ালিশন অব ইণ্ডিজিনাস পিপলস অর্গনাইজেশন’ এর পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের আদিবাসী জাতিসমূহের মানবাধিকারের উপর একটি বিকল্প প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে। ইউপিআর অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও সহ সাধারণ সম্পাদক বিনোতাময় ধামাই, কাপেং ফাউন্ডেশনের এ্যাডভোকেট বিধায়ক চাকমা ও আদিবাসী নারী প্রতিনিধি উষা চাক অংশগ্রহণ করেন।
ইউপিআর অধিবেশনে যে সমস্ত সদস্য-রাষ্ট্র পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এবং আদিবাসীদের মানবাধিকার ও পরিস্থিতি উপর যে বলিষ্ঠ বক্তব্য প্রদান করেছে সেজন্য আদিবাসী নেতৃবৃন্দ তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। লিখিত বক্তব্যে সঞ্জীব দ্রং আরো বলেন, সদস্য-রাষ্ট্রগুলো তাদের বক্তব্যে একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও আদিবাসী মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের পুনরায় প্রতিশ্র“তি প্রদানকে স্বাগত জানিয়েছে অন্যদিকে বিগত চার বছরের অধিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত থাকায় এবং নারী ও শিশুসহ আদিবাসী ও সংখ্যালঘু জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন চলতে থাকায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বলে তিনি জানান।
লিখিত বক্তব্যে সঞ্জীব দ্রং আরো বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সর্বপ্রথম দেশের ৪৮টি নৃগোষ্ঠী ও ট্রাইবাল সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করেছে বলে সরকার ইউপিআরে যে বক্তব্য দিয়েছে তা এই তথ্য সর্বাংশে সঠিক নয়। পঞ্চদশ সংশোধনীতে কোথাও সুনিদিষ্ট করে ৪৮টি নৃগোষ্ঠী ও ট্রাইবাল সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইনে ত্র“টিপূর্ণভাবে ২৭টি জাতির নাম উল্লেখ রয়েছে। আদিবাসী জনগণের প্রবল দাবী সত্ত্বেও বাদপড়া অবশিষ্ট জাতিসমূহের নাম সরকার উক্ত আইনে অন্তর্ভুক্ত করেনি। ফলে বাদপড়া জাতিসমূহ নানাভাবে হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে উল্লেখিত “উপ-জাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়” আখ্যাগুলো আদিবাসী জনগণ গ্রহণ করেনি। অপরদিকে সংবিধানে ৬(ক) ধারায় “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী” মর্মে উল্লেখের মাধ্যমে আদিবাসী জাতিসমূহকে ‘বাঙালি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং আদিবাসীদের আত্ম-পরিচয়ের সহজাত অধিকারকে সম্পূর্ণভাবে পদদলিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইউপিআরে এসব বিষয়গুলো সম্পূর্ণভাবে আড়াল করে গেছে।
আদিবাসী নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, যদিও সরকার ইউপিআরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর বিগত সাড়ে চার বছরের সময়ে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে দৃঢ়তা প্রদর্শনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের কথা কেবল প্রতিশ্র“তিতে সীমাবদ্ধ ছিল; চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থার ক্ষেত্রে সরকার একদিকে যেমন অপূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রদান করেছে, তেমনি অনেক তথ্য গোপন করেছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে ২৩টি বিষয়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে ২২টি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে ২১টি দপ্তর হস্তাস্তর করা হয়েছে। সরকারের এই তথ্য সর্বাংশে সঠিক নয় বলে নেতৃবৃন্দ অভিমত ব্যক্ত করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সাথে পরামর্শ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ এর কতিপয় ধারা সংশোধনের কাজ বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে সরকার ইউপিআরে উল্লেখ করলেও কোন এক রহস্যজনক জায়গায় গিয়ে এই আইন সংশোধনের প্রক্রিয়াকে বরাবরই আটকে দেয়া হচ্ছে বলে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন। এমনকি আইনমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ৩০ জুলাই ২০১২ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ৯ মাস অতিক্রান্ত হলেও আজ অবধি উক্ত সভার কার্যবিবরণী প্রস্তুত করা হয়নি, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এসব বিষয় সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সাথে গোপন রেখে ইউপিআরে এ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেছে বলে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট বিষয়/ক্ষমতা হস্তান্তর না করে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত না করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে অকার্যকর অবস্থায় রাখা রয়েছে এবং আঞ্চলিক পরিষদের কার্যবিধিমালা প্রণয়নের কাজ আজ ১৫ বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখা রয়েছে বলে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন।
সরকার আদিবাসীদের মানবাধিকার উন্নয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও আইএলও কনভেনশন নং ১০৭ এর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং আইএলও কনভেনশন নং ১৬৯ অনুস্বাক্ষরের যথাযথ এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
ঢাকা: জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের উপর জাতিসংঘের
মানবাধিকার কাউন্সিলের দ্বিতীয় বার সার্বজনীন পুনর্বীক্ষণ পদ্ধতির (ইউনিভার্সাল পিরিওডিক
রিভিউ) অধিবেশনে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও আদিবাসীদের সাংবিধানিক
স্বীকৃতি বিষয়ে অপূর্ণাঙ্গ তথ্য পেশ করেছে এবং বাস্তব সত্যকে আড়াল করেছে বলে বাংলাদেশ
আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশন অভিযোগ করেছে। তবে ইউপিআর অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম
চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি প্রদান করায় এবং আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী
বিষয়ক আইএলও কনভেনশন নং ১৬৯ বিষয়ক বিভিন্ন সভায় সরকারের কার্যকর অংশগ্রহণসহ আইএলও কনভেনশন
১০৭ বাস্তবায়নে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শনের জন্য আদিবাসী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ
বাংলাদেশ সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। সেই সাথে ২০০৯ সালের ইউপিআরে সরকার একই ধরনের প্রতিশ্রুতি
প্রদান করেও বিগত সাড়ে চার বছরের সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর
উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বলে নেতৃবৃন্দ উদ্বেগও জানিয়েছে।
আজ ১৭ মে ২০১৩ সকাল ১১.০০ ঘটিকায় ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর মিলনায়তনে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশের উপর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের দ্বিতীয় বার সার্বজনীন পুনর্বীক্ষণ পদ্ধতির (ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ) অধিবেশনে সরকারের বক্তব্যের উপর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ এসব অভিমত তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কাপেং ফাউন্ডেশনে উপদেষ্টা ও আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. ডালেম চন্দ্র বর্মন, আদিবাসী অধিকার কর্মী মঙ্গল কুমার চাকমা, কাপেং ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন চৈতালী ত্রিপুরা ও সমন্বয়কারী মংসিংঞো, মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন ও বিশিষ্ট সাংবাদিক সালিম সামাদ।
ড. ডালেম চন্দ্র বর্মন বলেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার কেবল একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। তিনি কেবল প্রতিশ্রুতিতে নয়, প্রকৃত বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ইউপিআরে সরকারের প্রতিশ্রুত বিষয়াবলী বাস্তবায়নে সহযোগি ভূমিকা পালনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও তিনি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য যে, গত ২৯ এপ্রিল ২০১৩ জেনেভায় অবস্থিত জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ (ইউপিআর) এর আওতায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা হয়েছে। উক্ত প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও এনজিও-এর পক্ষ থেকে ২৭টি বিকল্প প্রতিবেদন পেশ করেছে। ‘কোয়ালিশন অব ইণ্ডিজিনাস পিপলস অর্গনাইজেশন’ এর পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের আদিবাসী জাতিসমূহের মানবাধিকারের উপর একটি বিকল্প প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে। ইউপিআর অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও সহ সাধারণ সম্পাদক বিনোতাময় ধামাই, কাপেং ফাউন্ডেশনের এ্যাডভোকেট বিধায়ক চাকমা ও আদিবাসী নারী প্রতিনিধি উষা চাক অংশগ্রহণ করেন।
ইউপিআর অধিবেশনে যে সমস্ত সদস্য-রাষ্ট্র পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন এবং আদিবাসীদের মানবাধিকার ও পরিস্থিতি উপর যে বলিষ্ঠ বক্তব্য প্রদান করেছে সেজন্য আদিবাসী নেতৃবৃন্দ তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। লিখিত বক্তব্যে সঞ্জীব দ্রং আরো বলেন, সদস্য-রাষ্ট্রগুলো তাদের বক্তব্যে একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও আদিবাসী মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের পুনরায় প্রতিশ্র“তি প্রদানকে স্বাগত জানিয়েছে অন্যদিকে বিগত চার বছরের অধিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত থাকায় এবং নারী ও শিশুসহ আদিবাসী ও সংখ্যালঘু জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন চলতে থাকায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বলে তিনি জানান।
লিখিত বক্তব্যে সঞ্জীব দ্রং আরো বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সর্বপ্রথম দেশের ৪৮টি নৃগোষ্ঠী ও ট্রাইবাল সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করেছে বলে সরকার ইউপিআরে যে বক্তব্য দিয়েছে তা এই তথ্য সর্বাংশে সঠিক নয়। পঞ্চদশ সংশোধনীতে কোথাও সুনিদিষ্ট করে ৪৮টি নৃগোষ্ঠী ও ট্রাইবাল সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইনে ত্র“টিপূর্ণভাবে ২৭টি জাতির নাম উল্লেখ রয়েছে। আদিবাসী জনগণের প্রবল দাবী সত্ত্বেও বাদপড়া অবশিষ্ট জাতিসমূহের নাম সরকার উক্ত আইনে অন্তর্ভুক্ত করেনি। ফলে বাদপড়া জাতিসমূহ নানাভাবে হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে উল্লেখিত “উপ-জাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়” আখ্যাগুলো আদিবাসী জনগণ গ্রহণ করেনি। অপরদিকে সংবিধানে ৬(ক) ধারায় “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী” মর্মে উল্লেখের মাধ্যমে আদিবাসী জাতিসমূহকে ‘বাঙালি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং আদিবাসীদের আত্ম-পরিচয়ের সহজাত অধিকারকে সম্পূর্ণভাবে পদদলিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইউপিআরে এসব বিষয়গুলো সম্পূর্ণভাবে আড়াল করে গেছে।
আদিবাসী নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, যদিও সরকার ইউপিআরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর বিগত সাড়ে চার বছরের সময়ে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে দৃঢ়তা প্রদর্শনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের কথা কেবল প্রতিশ্র“তিতে সীমাবদ্ধ ছিল; চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থার ক্ষেত্রে সরকার একদিকে যেমন অপূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রদান করেছে, তেমনি অনেক তথ্য গোপন করেছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে ২৩টি বিষয়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে ২২টি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে ২১টি দপ্তর হস্তাস্তর করা হয়েছে। সরকারের এই তথ্য সর্বাংশে সঠিক নয় বলে নেতৃবৃন্দ অভিমত ব্যক্ত করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সাথে পরামর্শ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ এর কতিপয় ধারা সংশোধনের কাজ বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে সরকার ইউপিআরে উল্লেখ করলেও কোন এক রহস্যজনক জায়গায় গিয়ে এই আইন সংশোধনের প্রক্রিয়াকে বরাবরই আটকে দেয়া হচ্ছে বলে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন। এমনকি আইনমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ৩০ জুলাই ২০১২ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ৯ মাস অতিক্রান্ত হলেও আজ অবধি উক্ত সভার কার্যবিবরণী প্রস্তুত করা হয়নি, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এসব বিষয় সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সাথে গোপন রেখে ইউপিআরে এ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেছে বলে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট বিষয়/ক্ষমতা হস্তান্তর না করে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত না করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে অকার্যকর অবস্থায় রাখা রয়েছে এবং আঞ্চলিক পরিষদের কার্যবিধিমালা প্রণয়নের কাজ আজ ১৫ বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখা রয়েছে বলে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন।
সরকার আদিবাসীদের মানবাধিকার উন্নয়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও আইএলও কনভেনশন নং ১০৭ এর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং আইএলও কনভেনশন নং ১৬৯ অনুস্বাক্ষরের যথাযথ এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি