মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৩

পিসিপি'র দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সিএইচটি নিউজ বাংলা, ২২ মে ২০১৩, বুধবার
খাগড়াছড়ি: বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ২১ মে সকাল সাড়ে ১১টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের নারাঙখিয়াস্থ সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পুনর্মিলনী আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক প্রদীপন খীসা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর সভাপতি প্রসিত খীসা, পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক পিসিপি নেতা সর্বোত্তম চাকমা, মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সোনা রতন চাকমা, সাবেক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান সুপন চাকমা, ঘিলাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক পিসিপি নেতা অমর জীবন চাকমা, পিসিপি'র সাবেক নেতা রত্ন কুসুম চাকমা, পিসিপি'র সাবেক সভাপতি দীপংকর ত্রিপুরা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা।

অনুষ্ঠানে অনেকে পিসিপি'র দুই যুগ আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড পিপল্‌স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) এর কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, সচিব চাকমা, শান্তিদেব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি নতুন কুমার চাকমা, বিশিষ্ট মুরুব্বী কিরণ মারমা ও সমারি চাকমা প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকা থেকে পিসিপি'র সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পিসিপি'র সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ'র খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা।

প্রসিত খীসা তার বক্তব্যে বলেন, পিসিপি'র দুই যুগের আন্দোলনে আমি একজন সাক্ষী। '৮৯ সালে যদি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠিত না হতো তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অবস্থা আরো খারাপ হতো। সে সময় যদি ছাত্র জাগরণ না হতো তাহলে জেএসএস'র আন্দোলন আরো বহু আগে ভেস্তে যেতো। ছাত্র আন্দোলনের ফলে চাপের মুখে সরকার জনসংহতি সমিতির সাথে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছে।
ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতকে বেদনাদায়ক উলেস্নখ করে তিনি বলেন, সব জাতির জন্য ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত খুবই বেদনাদায়ক। বর্তমানে আমরা এই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বেদনাময় সময় অতিক্রম করছি।

তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম যদি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, পুরাতন সহযোদ্ধারা যদি উসাহ উদ্দীপনা যোগায় তাহলে আমরা আরো উদ্দীপ্ত হই। যারা বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত রয়েছেন তারাও বিভিন্নভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ভূমিকা পালন করতে পারেন।

তিনি শহীদ সহযোদ্ধাদের স্মরণ করে বলেন, আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য আমাদের মন ব্যথিত হয়, কিন্তু আমরা ভেঙে পড়ি না। বিপস্নবীরা ভেঙে পড়ার জন্য ব্যথিত হয় না। পিসিপি'র ২ যুগের আন্দোলনে অনেক সহযোদ্ধা বীরত্বপুর্ণভাবে শহীদ হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে, আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে শহীদদের আত্মবলিদান সফল হবে।


তিনি পিসিপি'র নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, টাকা দিয়ে যোগ্যতা অর্জন করা যায় না। নিজের মধ্যেই যোগ্যতা সৃষ্টি করতে হবে। ফাকি দিয়ে আন্দোলন সফল হয় না। আন্দোলন সফল করার জন্য প্রয়োজন আত্মবলিদান, একাগ্রতা ও কঠোর দেশপ্রেম। আগামী দিনে আন্দোলন জোরদার করার জন্য পিসিপিকে আরো বেশি সোচ্চার হতে হবে। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা সৃষ্টি করতে হবে।

সর্বোত্তম চাকমা বলেন, আমরা যখন পিসিপি'র আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। জেএসএস'র মদদে ছাত্র নামধারী দুই নাম্বারীরা নানাভাবে আমাদের বাধাগ্রস্ত করেছে। কিন্তু সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে আমরা কাজ করেছি। তিনি বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথাও স্মরণ করেন।

সোনা রতন চাকমা জাতীয় অস্ত্মিত্ব রক্ষার আন্দোলনকে অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যতদিন পর্যন্ত অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না, ততদিন পর্যন্ত আমাদের শান্তি নেই। তাই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, অনির্বাচিত জেলা পরিষদের কারণে জাতীয় অস্ত্মিত্ব ধ্বংস হবার উপক্রম হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসন চলছে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে। এর বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হবে।

অনুষ্ঠান শেষে এক প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়।

সন্ধ্যায় নারাঙখিয়া মাঠে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে বিপ্লবী সংগীত সহ জাগরণমূলক গান, নাচ ও নাটিকা পরিবেশন করা হয়। দিঘীনালা ও খাগড়াছড়ির শিল্পীরা এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।