বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

ইউপিডিএফ-এর বৈসাবি শুভেচ্ছা: উৎসবে স্ব স্ব ঐতিহ্য সংস্কৃতি তুলে ধরার আহ্বান

সিএইচটি নিউজ বাংলা, ১১ এপ্রিল ২০১৩, বৃহস্পতিবার
পার্বত্য চট্টগামে ঐতিহ্যবাহী মহান বৈসাবি(বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু) উসবের প্রাক্কালে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমে প্রেরিত এক দীর্ঘ বার্তায় পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপল্‌স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সভাপতি প্রসিত খীসা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি সকল অধিবাসী, বিদেশে প্রবাসী পাহাড়ি ও দেশবাসীর প্রতি বৈসাবি’র শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি মহান বৈসাবির চেতনায় নিজেদের মধ্যে ঐক্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ জোরদার করার পাশাপাশি স্ব স্ব জাতীয় ঐতিহ্য সংস্কৃতির মাধ্যমে নিজ নিজ জাতিসত্তার পরিচিতি তুলে ধরার আহ্বান জানান। এছাড়া প্রাসঙ্গিক কারণে তিনি ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের ব্যাপারে তার দলীয় মন্তব্য তুলে ধরেন।

সাম্প্রতিক মাটিরাঙ্গায় সেটলার কর্তৃক ত্রিপুরা বসতিতে হামলা এবং দীঘিনালায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা ও রামগড়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ-প্রচেষ্টা ইত্যাদি সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে এবারের বৈসাবি উসব অধিকারহারা জনগণের শত দুঃখ-বেদনা জর্জড়িত জীবনে যেন কিছুটা হলেও আনন্দ বয়ে আনে বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা সে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সংখ্যালঘু জাতি-সম্প্রদায়, নারী ও সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার, জানমাল রক্ষায় চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন এবং জনগণের নিরাপত্তা বিধানে আরও বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

১৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষা সূচি পরিবর্তন করে পরীক্ষার্থীদের বৈসাবি উসবে সামিল হবার সুযোগ দেয়ায় ইউপিডিএফ নেতা বিবৃতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে এজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। অনুরূপভাবে অন্যান্য শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ, সরকারি-আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা, ব্যক্তি মালিকাধীন ব্যবসা শিল্প প্রতিষ্ঠান-কারখানামূহের কর্তৃপক্ষকেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ঐতিহ্য সংস্কৃতি তথা আবেগ-অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল হবার আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা বলেন, 'উসবের কারণে তিন পার্বত্য জেলাকে হরতালের আওতামুক্ত রাখার ঘোষণা দেয়া বিএনপির সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত হলেও দলটি নীতিগতভাবে পাহাড়ি জনগণের অধিকার মেনে নেয় নি এবং অতীতে তার সরকারের নির্যাতনের কারণে পাহাড়িদের বহু বৈসাবি উসব পণ্ড হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে বিএনপি’র ব্যাপারে জনগণ সংশয়মুক্ত নন। পাহাড়ি জনগণ এ বিষয়ে বিএনপি'র নিকট হতে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করে।’

ইউপিডিএফ নেতা বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসত্তার জনগণের জানমাল রক্ষা করতে কেবল ব্যর্থতার পরিচয়ই দিচ্ছে না, রাঙ্গামাটি-রামুসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় সহিংস হামলা-লুটপাটের সাথে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সংশিস্নষ্টতার প্রমাণও মিলেছে, যা আরও বেশি উদ্বেগজনক। অসাম্প্রদায়িকতার কথা বললেও এ দলটি উগ্র জাতীয়তাবাদী লাইন গ্রহণ করে ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসমূহের ওপর বাঙালি পরিচয় চাপিয়ে দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসমূহ এবং দেশের অন্যান্য জাতি ও সম্প্রদায় তা কখনই মেনে নেয় নি এবং নেবে না।’

তিনি বলেন, সংবিধানের বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী দেশের সকল নাগরিকগণের জাতীয়তা 'বাঙালি' হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীও বাঙালির নববর্ষ পালনে বাধা সৃষ্টি করেছিল। ‘বাঙাল’ জাতীয়তা বজায় থাকলে তা পাহাড়িদের স্ব স্ব ঐতিহ্য সংস্কৃতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এ ব্যাপারে সজাগ না হলে ভবিষ্যতে স্ব স্ব ঐতিহ্য সংস্কৃতি অনুযায়ী বৈসাবি উসব পালনেও সরকারি হস্তক্ষেপ ঘটতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনও সেনা কর্তৃপক্ষ নিজেদের ফরমায়েশ অনুযায়ী অনুষ্ঠান উসব করতে সাধারণ লোকজনকে বাধ্য করে থাকে।
----