সিএইচটি নিউজ বাংলা, ২৬
ডিসেম্বর ২০১৩, বৃহস্পতিবার
আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
২৯৮ নং খাগড়াছড়ি আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ইউপিডিএফের সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা
নিজ নির্বাচনী এলাকায় কাজ শুরু করেছেন। এবারের নির্বাচনে তিনি হাতি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন।
গত ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার
সন্ধ্যায় তিনি খাগড়াছড়িতে এসে পৌঁছেন। আসার পর তিনি নির্বাচনী অফিস পরিদর্শন করেন।
গতকাল বুধবার(২৫ ডিসেম্বর) তিনি প্রধান নির্বাচনী অফিস ঠিকাদার সমিতি ভবন ও হুয়াং-বোইও
বা’র হলরুমে খাগড়াছড়ি সদর সহ বিভিন্ন এলাকার মুরুব্বী ও সামাজিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের
সাথে সৌজন্য মতবিনিময় করেন।
এসময় তিনি বলেন, আমরা এ
অঞ্চলের সকল জাতিসত্তার মঙ্গলের জন্য কাজ করছি। সবাইকে নিয়েই আমাদের ভালো থাকতে হবে।
এ অঞ্চলে যদি আমরা একটি কাঙ্খিত সমাজ দেখতে চাই, তাহলে আমাদের দরকার একটা হাতিয়ার।
আর সে হাতিয়ারটা হচ্ছে রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ক্ষমতা।
তিনি বলেন, কাউকে বাদ দিয়ে,
কাউকে ফেলে রেখে, কাউকে অন্যায়ভাবে সুবিধা দিয়ে নয়, ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে সমাজ প্রতিষ্ঠা
করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী
লীগ প্রার্থী যদি জয়যুক্ত হয় তাহলে হয়তো ব্যক্তিবিশেষে কেউ কেউ সুবিধা করতে পারবে,
ব্যক্তিগতভাবে কারোর কারোর অনেক কিছু জুটবে কিন্তু সমগ্র জনগণের কোন কিছুই হবে না।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কেন আওয়ামী লীগ পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩টি আসন পেতে
চায়? আওয়ামী লীগ যদি প্রকৃতই সংখ্যালঘু জাতিগুলোর দরদী-সহানুভূতি দল হয়, তাহলে তার
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি আসনের দরকার নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ তিনটি আসন কব্জা করেই
আমাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করে রাখতে চায়। তারা চায় আমরা যাতে সংসদে গিয়ে আমাদের দুঃখ-দুর্দশা
তুলে ধরতে না পারি।
প্রসিত খীসা বলেন, পরপর
২বার আওয়ামী লীগের যারা নির্বাচিত হয়েছেন সংসদে গিয়ে তারা কি করেছে তা সবার জানা। তারাতো
এ অঞ্চলের জনগণের পক্ষে কোন কথা বলেনি। বরং বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ
সংশোধনী বিল পাসের সময় তারা টেবিল চাপড়িয়ে বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সরকার যেসব
রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে
তাদেরকে জবাব দেয়ার সময় উপস্থিত হয়েছে। কাজেই, আর ভুল করা যাবে না।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমাদের
হাতে যদি প্রশাসনিক-রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকে, তাহলে
সমাজে যা ভেঙে পড়েছে, যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে তা ঠিক করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা
করতে পারবো। আমরা চাই সমাজে যারা সম্মানিত ব্যক্তি তারা যাতে যথোপযুক্ত সম্মান পায়,
যারা শিশু তারা যাতে সঠিক আদর-যতœ পায় আর যারা তরুণ-যুবক তারা যাতে কাজের পরিবেশ পায়।
তিনি জুম্ম শরণার্থীদের
বিষয়ে বলেন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীরা আজ অনেকভাবে অবহেলিত। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে
তারা নিজ বাস্তুভিটা হারিয়েছেন। তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য সবার সহযোগিতা থাকা
দরকার। সংগঠন হিসেবে তাদের বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। তারা যাতে তাদের অধিকার আদায়
করতে পারে সেজন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা থাকবে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের
মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মি.সচিব
চাকমা, উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, শান্তিদেব চাকমা ও দীপায়ন চাকমা প্রমুখ।
প্রসিত বিকাশ খীসা আজ ২৬
ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে ইউপিডিএফ’র ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ
করেন। এরপর দুপুর ১:১০টায় তিনি ধর্মপুর বনবিহারে ভিক্ষুসংঘের সাথে মতবিনিময় করেন। এ
সময় ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সমন্বয়ক প্রদীপন খীসা, কেন্দ্রীয় নেতা শান্তিদেব
চাকমা ও রবিচন্দ্র চাকমা উপস্থত ছিলেন। ভিক্ষু সংঘের মধ্যে রাঙামাটি রাজবন বিহারের
আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, ফুরমোন আন্তর্জাতিক ভাবনা
কেন্দ্রের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ভৃগু মহাস্থবির, ধর্মপুর বনবিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ
ভদ্দজী মহাস্থবির, রাবজন বিহারের শ্রীমৎ সৌরজগত মহাস্থবির, রাঙামাটি তপোবন অরণ্য কুটিরের
অধ্যক্ষ শ্রীমৎ জিনপ্রিয় মহাস্থবির, শান্তিপুর অরণ্য কুটিরের অধ্যক্ষ
শ্রীমৎ শাসন রক্ষিত মহাস্থবির, রাজবন বিহারের শ্রীমৎ
ধর্মবোধি মহাস্থবির ও ভদ্দিয় মহাস্থবির সহ ১৫ জন ভিক্ষু উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রসিত
খীসার পক্ষ থেকে অষ্ট পরিষ্কার দান ও পিন্ডদানের মাধ্যমে ভিক্ষু সংঘের আশীর্বাদ প্রার্থনা
করা হয়। ভিক্ষু সংঘ জাতির শ্রীবৃদ্ধি ও আসন্ন নির্বাচনে জয়যুক্ত হওয়ার জন্য প্রসিত
খীসাকে আশীর্বাদ প্রদান করেন।
এছাড়াও আজ বিকালে তিনি
রিবেং ট্রেনিং সেন্টারে খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট মুরুব্বীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন।