রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৩

দিঘীনালায় শহীদ ভরদ্বাস মুনির ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

সিএইচটি নিউজ বাংলা, ১৩ অক্টোবর ২০১৩, রবিবার


দিঘীনালা প্রতিনিধি : পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ ভরদ্বাস মুনি চাকমার ২১তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) আজ ১৩ অক্টোবর রবিবার দিঘীনালায় শোক র‌্যালী ও সমাবেশের আয়োজন করে।

এ উপলক্ষে সকাল ৮.৩০ টায় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্প মাল্য অর্পনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে শহীদ পরিবারবর্গ, ইউপিডিএফ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গনতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষ, ছাত্র-যুবক অংশগ্রহণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এরপর সকাল ৯ টায় একটি শোক র‌্যালী শুরু হয়। র‌্যালীটি শহীদ ভরদ্বাসমুনি চাকমার স্মৃতিস্তম্ভ পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে থানাবাজার, উপজেলা কমপ্লেক্স, কলেজ গেইট, বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে লারমা স্কয়ারে এসে শোক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ দিঘীনালা থানা শাখার সভাপতি সুরেশ চাকমা। এতে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ এর অন্যতম সংগঠক দেবদন্ত ত্রিপুরা, পিসিপির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন দিঘীনালা থানা শাখার সহ সাধারন সম্পাদক এন্টি চাকমা, পিসিপি দিঘীনালা কলেজ শাখার সভাপতি রূপেশ চাকমা, যুব নেতা মঞ্জু চাকমা। 

সমাবেশে ভরদ্বাস মুনির উদ্দেশ্যে স্বরচিত কবিতা উপস্থাপন করেন দিঘীনালার খ্যাতিমান কবি বরদেন্দু চাকমা।

সমাবেশে বক্তরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন, সেনা ও বহিরাগত বাঙ্গালীদের প্রত্যাহারসহ সকল হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান।

বক্তারা শহীদ ভরদাসমুনির আত্মবলিদান থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।

শোক র‌্যালী ও সভা পরিচালনা করেন পিসিপি থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক জহেল চাকমা।

নীচে কবি বরদেন্দু চাকমার পঠিত স্বরচিত কবিতাটি দেয়া হল:


জুম্ম জাতির সোনালী ইতিহাসে
                         -- বরদেন্দু চাকমা (২০১৩ইং)

ভরদ্বাসমুনি তুমি আবার কবে আসবে ফিরে,
বানছড়া গ্রামে সবুজ শ্যামল পল্লীমায়ের কোলে।
ঢেউ খেলানো সারি সারি উঁচু নীচু পাহাড়,
সে মায়াবী স্বপ্ন পুরীর দেশে জন্ম তোমার।
ছিল আশা ছিল ভালবাসা ছিল কত স্বপ্ন,
খেটে খাওয়া সরল মানুষ তুমি যদিও হত দরিদ্র।
ঘরে ছিল পিতা মাতা ভাই বোন স্ত্রী পুত্র ছেলে মেয়ে,
অপেক্ষা করছিল সওদা নিয়ে ঘরে যাবে ফিরে।
সে দিন পেটে অন্য মিলেনি পানিতো দূরের কথা,
তুমি ফিরে গেলে লাশ হয়ে শোকে ব্যাকুল জনতা।
সেই কালো দিন গুলো কত ভয়াবহ লোম হর্ষক কাহিনি,
পাশবিক অত্যাচার নির্মম পাষাণ নিষ্ঠুরতা আজো ভূলতে পারিনি।
১৩ই অক্টোবর স্মরণ করিয়ে দেয় মোদেরে,
তোমার বেদনার শত ধ্বনি।
আকাশে বাতাসে নদী গীরি কান্তারে,
শুধু মনে পড়ে তোমাকে ভরদ্বাস মনি।
সেই দিন বজ্র কন্ঠে প্রকম্পিত হয় আকাশ বাতাস,
তোমার প্রতিবাদ, তোমার বাঁচার আর্তনাদ,
তুমি হারিয়ে যাওনি কোথাও, তুমি বেঁচে আছো,
লক্ষ জুম্ম জনতার পাশে জেগে আছো।
যতদিন আকাশে চাঁদ তারা হাঁসবে,
যতদিন আকাশে চন্দ্র সূর্য উঠবে,
ততদিন তুমি আমাদের মন মন্দিরে প্রদীপ হয়ে জ্বলবে।
ততদিন জুম্ম জাতির সোনালী ইতিহাসে তোমার নাম লেখা থাকবে।