শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৩

উজাড় হচ্ছে পার্বত্য চট্রগ্রামের বনাঞ্চল: ধ্বংসের মুখে জীববৈচিত্র্য

সিএইচটি নিউজ বাংলা, ২৪ মে ২০১৩, শুক্রবার
ডেস্ক রিপোর্ট : পার্বত্য চট্রগ্রামে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে বনাঞ্চল। প্রাকৃতিক বন উজাড় হওয়ার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বন্য প্রানী-পাখি, কীট-পতঙ্গ। ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। এক সময়ে দেশের সর্ববৃহ সবুজ পার্বত্য চট্রগ্রাম প্রাকৃতিক বনের আজ পরিচয়-ন্যাড়া বন হিসেবে।  অনেকে পার্বত্য ন্যাড়া বনের দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এখনি আইনের প্রয়োগ করে দখল প্রতিযোগিতা বন্ধ করা সম্ভব না হলে প্রকৃতির প্রতিশোধে একসময় হয়তো কাঁদতে হবে পুরো জাতিকেই।

 সর্বশেষ প্রনীত  বন্যপ্রাণী (সংরক্ষন ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ এর চারটি তফসিলে বাংলাদেশে উভচর ৩২ প্রজাতির, সরীসৃপ ১৩১ প্রজাতির, ৬২২ প্রকারের পাখি, ৮৩ ধরনের কীট-পতঙ্গ, ১৩৭ ধরনের স্তন্যপায়ী প্রানীসহ বিভিন্ন ধরনের ১২৩১ প্রজাতির উল্লেখ রয়েছে। আর  উল্লেখিত চার তফসিলের এসব প্রানীর অধিকাংশেরই অস্তিত্ব একসময় খুজে পাওয়া যেত পার্বত্য চট্রগামের দশ লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার ৩০৬ একর আয়তনের এই প্রাকৃতিক বনে। বনবিভাগ সুত্রে জানা যায়, সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ শুধু রাঙ্গামাটিতে বনবিভাগের রয়েছে প্রায় ছয় লক্ষ ত্রিশ হাজার একর, খাগড়াছড়িতে প্রায় এক লক্ষ একর আর বান্দরবানে রয়েছে তিন লক্ষ পাঁচ হাজার একর বনভুমি। এই প্রাকৃতিক বনেই একসময় ছিল শতশত প্রকারের গুল্মলতা, অর্কিডস, নানা ধরনের গাছপালাসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ । আর বিচরন ছিল শতশত প্রকারের বন্য প্রানী, পাখি ও কীটপতঙ্গের। এক কথায় জীব বৈচিত্রের ষোল আনা পরিপূর্ণ ছিল এ বনে। কিন্তু ক্রমাগত বনাঞ্চল দখল করে বসতিসহ নানা স্থাপনা তৈরি, জুমের আগুনে পুড়িয়ে বনাঞ্চলসহ বন্যপ্রানী ধবংস, অপরিকল্পিতভাবে ঝুমচাষ, গাছপাচারসহ নানা কারনে আজ হুমকির মুখে বনাঞ্চল। নিরাপদ আশ্রয় হারিয়ে বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন বন্য প্রানী, পাখি ও কীটপতঙ্গ। মানুষের কারনেই ক্রমাগত উজাড় হয়ে যাচ্ছে বন, বন্য প্রানী-পাখিসহ উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতি। এভাবে চলতে থাকলে খুব অল্পসময়ে পার্বত্য প্রাকৃতিক বন বলতে আর কিছুই থাকবেনা।

তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে বন মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনডিপি জাতীয় বননীতি ১৯৯৪ অনুসারে ২০ বছর মেয়াদী বন মহাপরিকল্পনা ১৯৯৩-২০১৩ সাল পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে বলে জানা গেছে।  পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের ২০শতাংশ ভূমি বনায়ন করার কথা থাকলেও পার্বত্য অঞ্চলে তা অকার্যকর রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর অধীনে তা পার্বত্য এলাকায় কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

খাগড়াছড়ির কুমিল্লা টিলার তোতা মিয়া জানান, এক সময় আমাদের এলাকায় বাড়ির আশে-পাশে হরিণ,বানর,হনুমানসহ বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি দেখতে পেতাম, বর্তমানে বন উজাড় করে জনবসতি গড়ে ওঠার কারনে জীবজন্তু আগের মত দেখা যায়না।তিনি আরো জানান, পাহাড়ে বসবাসরত কয়েকটি সম্প্রদায়ের লোকেরা বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করায় বন্যপ্রানী কমে যাওয়ার একটি কারণ হতে পারে।ভয়াছড়ি এলাকার গ্রীণহিল নার্সারীর স্বত্বাধিকার মো: মাহবুবুল হক সেলিম জানান ,আমরা যে পরিমান বৃক্ষ নিধন করি তার তুলনায় অনেক কম  সৃজন করি, যার ফলে পাহাড়ের বনভুমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। জীবজন্তুর আবাসভুমি হারিয়ে যাওয়ার কারণে বন্যপ্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলে লাইসেন্স বিহীন ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠা ব্রীক ফিল্ডগুলোতে অবাধে গাছ কেটে পোড়ানোর ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাই আড়তে মজুদ করা হয় এসব অবৈধ কাঠ। পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরী ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই অবশ্লিষ্ট বন ভূমি উজাড় হয়ে পার্বত্যাঞ্চল মরুভুমিতে পরিনত হবে,হারিযে যাবে বন্যপ্রাণী।

 খাগড়াছড়ি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ জহুরুল আলম বলেন ”বন্য পশু-পাখিরা আজ অস্তিত্ব বজায় রাখতেই ছাড়ছে পার্বত্য চট্রগ্রামের বনাঞ্চল। মানুষের ক্রমাগত বনাঞ্চল দখলের কারনে ঘটছে এসব”।

জেলা প্রশাসক ও সভাপতি, খাগড়াছড়ি জেলা বন ও বন্যপ্রানী সংরক্ষন কমিটিঃ মোঃ মাসুদ করিম বলেন নানা কারনে ধবংসের মুখে বন্য প্রানী। একটি বিশেষ মহলের কারনে গত দু’দশকেও সম্প্রসারন করা যায়নি বনাঞ্চল।

 সচেতন মহলের প্রত্যাশা বাংলাদেশের বন্যপ্রানী সংরক্ষন ও ব্যাবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রচলিত আইন রহিত পূর্বক দেশের জীববৈচিত্র্য, বন ও বন্যপ্রানী সংরক্ষন ও নিরাপত্তা বিধানকল্পে প্রনীত আইনের প্রয়োগ হোক যথাযথ, রক্ষা হোক বনাঞ্চল, নিরাপদে থাকুক বন্যপ্রানী।

সূত্র: পার্বত্যনিউজ ডটকম