শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৩

জীবন যুদ্ধে দুই চোখ হারালেন রাজস্থলীর চিংচিংমং তঞ্চঙ্গ্যা

সিএইচটি নিউজ বাংলা, ২৪ মে ২০১৩, শুক্রবার
রাজস্থলী প্রতিনিধি : সবাইতো সুখী হতে চায়। কেউ পায় কেউবা হারায়। ছায়াছবির এই গানটি এক সময় গ্রাম গঞ্জের সবার প্রিয়। আর এই গানের বাস্তবতাকে আখড়ে ধরে রাজস্থলী উপজেলায় আড়াছড়ি গ্রামের খজনী তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে চিংচিংমং তঞ্চঙ্গ্যা সুখী হতে চেয়েছিল সুজতা তঞ্চঙ্গ্যাকে নিয়ে। কিন্তু ২০০৭ সালের মাঘ মাসের দিকে একটি নির্মম ঘটনা তার স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছে।

কোরবান ছড়ি মুখ দোকানে বসে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে চিংচিংমং তঞ্চঙ্গ্যা (৩২) জানান, বিয়ের পর বেকার হয়ে পড়ি। বৃদ্ধ বাবার পরিবারের নানা আর্থিক সংকটের সমাধান করার দায়িত্ব আমার উপর পড়ে। এদিকে প্রথম সন্তান জন্ম হল। পাহাড়ের পেশাজীবিদের পৌষ-মাঘ মাসের সময় কাটে অনেকটা বেকার অবস্থায়। তাই আর্থিক সংকট ক্ষানিকটা দুর করতে বন্ধুদের সাথে পার্শ্ববর্তী ৫কিঃ মিঃ দুরে আড়াছড়ি মুখ কাপ্তাই উপজেলাধীন ফরেষ্ট রির্জাভ এলাকা দিয়ে কাজের সন্ধানে যাচ্ছিলাম।

পথ চলতে হঠা একটি ফায়ারের আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে হয়েছিল চোখে আগুন লেগেছে। আর কিছুই দেখলাম না। প্রচন্ড ব্যথায় মাটিয়ে শুইয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম একদল ফরেষ্টার আসছে। আমার কাছে এসে একে অন্যকে বলছে যাক লোকটি মারা গেছে। এ বলে তারা চলে গেল। কিছুক্ষণ পর অনুমান করে আমি হাটা শুরু করলাম। কোনখানে থেকে মানুষের কণ্ঠ শুনা যাচ্ছে না। খিদের যন্ত্রনা ঝিড়ি পানি আর কলা গাছ কামড় দিয়ে খেলাম। এভাবে রাত-দিন কেটে গেল। আমার শরীর, চোখে ও বিভিন্ন স্থান মাছি বসিয়ে পঁচন ধরল। ৬ষ্ট দিনে একদল ফরেস্ট স্টাফ সম্ভবত বাগান ভিজিট করতে এসেছে। মানুষের কণ্ঠ শুনে আমি বললাম, আমাকে একটু বাঁচাও। ফরেষ্ট স্টাফরা আমাকে দেখে খুব দুঃখ প্রকাশ করল। তারা আমাকে উদ্ধার করে আড়াছড়ি মুখ পাড়া নিয়ে আসে। সেখানে এক তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ীতে রেখে যায়। তারপর বাড়ীর লোকজন খবর পেয়ে আমাকে বাড়ীতে নিয়ে যায়।

চিংচিংমং বড় ভাই ক্যমং তঞ্চঙ্গ্যা জানান, খবর পেয়ে আড়াছড়ি মুখ থেকে ছোট ভাইকে দেখতে যাই। শরীরের পচঁন ধরে পোকা-মাকড় বসেছে। প্রাথমিক চিকিসা দেয়ার পর তাকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে থেকে আবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতাল কলেজের পাঠানো হয়। সেখানেও সুস্থ হতে পারেনি। পরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিসা করে সুস্থ হয়। অনেক টাকা খরচ করেও দু’চোখ কোনভাবে আর পৃথিবী দেখার সুযোগ হল না।

এক লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে চিংচিংমং বলল, দাদা সবই কর্মের দোষ, বেঁচেও আমি মরার মত আছি। আর মরলে এখন মানুষ হয়ে আবার বাঁচতাম। এই চোখের অন্ধত্ব জীবন নিয়ে বর্তমানে এক ছেলে দুই মেয়ে ও স্ত্রীর সুজতাকে নিয়ে কোরবান ছড়ার মুখে মুদির দোকান করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছি।
----