খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষীছড়ি উপজেলায় ১৪৪টি পিডিসি'র জন্য ইউএনডিপি কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে সশস্ত্র বোরকা পার্টির সন্ত্রাসী কর্তৃক জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদে পাড়া উন্নয়ন কমিটির(পিডিসি) নেতৃবৃন্দ আজ ৩১ মার্চ রবিবার খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরস্থ
ঠিকাদার সমিতি ভবনের হলরুমে সকাল সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন
হাজাছড়ি পাড়া উন্নয়ন কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ মোহন কার্বারী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,
ইউএনডিপি ২০০৫ সাল থেকে লক্ষীছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে পাড়া উন্নয়ন কমিটির (পিডিসি)
মাধ্যমে গ্রাম ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ সাহায্য দিয়ে আসছে। এতে এলাকার জনগণ নানাভাবে
উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ইউএনডিপি'র অর্থ সাহায্য আমাদের আশীর্বাদের পরিবর্তে
অভিশাপ ও আনন্দের পরিবর্তে হতাশার উৎসে পরিণত হয়েছে। কারণ বোরকা পার্টি নামধারী সন্ত্রাসীরা
লক্ষ্ণীছড়ির ১৪৪টি পিডিসি ও ৩৩টি পিএনডিসির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে জোরপূর্বক মোটা
অংকের চাঁদা আদায় করতে লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে। ফলে জনগণ এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাতে বাধ্য
হচ্ছেন।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বোরকা
পার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক হুমকি দেয়ার কথা উলেস্নখ করে বলেন, সশস্ত্র বোরকা
পার্টির ইন্দ্র মাষ্টার ওরফে সুবর্ণা বাপ (বয়স: ৫২, পিতা-জগৎচন্দ্র
চাকমা, গ্রাম-উত্তর শুকনাছড়ি, বর্মাছড়ি ইউপি, লক্ষীছড়ি উপজেলা) এবং জ্যোতিশ দেওয়ান
(বয়স ৪২ পিতা- যুকোমল দেওয়ান, গ্রাম-দেওয়ান পাড়া, দুল্যাতলী ইউপি, লক্ষীছড়ি) এলাকায়
সন্ত্রাসী হিসেবে খুবই পরিচিত। গত ১৭ ও ২৪ মার্চ লক্ষীছড়ি বাজারের সাপ্তাহিক হাটবারের
দিন (রবিবার) তারা পিডিসি ও পিএনডিসির দাদঙ্গ ছড়া গ্রামের নিবারণ চাকমা, ডানে বান্দরকাবা
গ্রামের সুরসেন কার্বারী, কান্দব পাড়ার কৃষ্ণ মোহন কার্বারী, তনুরাম পাড়ার ননী কুমার
চাকমা, পেক্কো পাড়ার প্রাক্তন মেম্বার গুলমনি চাকমা ও কৈলেশ মহাজন পাড়ার কুসুমতারা
চাকমাকে ডেকে দোকানের ভিতর নিয়ে গিয়ে হুমকি দিয়ে বলে যে, আগামী ১ এপ্রিল'১৩ রবিবার
প্রতি পাড়া উন্নয়ন কমিটি থেকে ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা তাদেরকে দিতে হবে। নির্ধারিত
সময়ের মধ্যে উক্ত টাকা দিতে ব্যর্থ হলে দ্বিগুণ অর্থাৎ
৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা দিতে হবে। অন্যথায় হাটের দিন বাজার থেকে তাদেরকেসহ পিডিসি
ও পিএনডিসির সদস্যদের অপহরণ করা হবে বলে তারা হুমকি দেয়। যাদেরকে সন্ত্রাসীরা হুমকি
দেয় তারা সবাই পিডিসি ও পিএনডিসির সভাপতি, সম্পাদক, ক্যাশিয়ার অথবা সদস্য।
তিনি আরো বলেন, এই বোরকা
পার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থেকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস,
বছরের পর বছর ধরে খুন, গুম, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে
আসছে। এক কথায় তারা লক্ষীছড়ি ও আশেপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সাধারণ
জনগণ তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে। ২০০৯ সালে গঠনের পর থেকে আজ পর্যন্ত্ম
বোরকাদের হাতে ৪ ব্যক্তি খুন, চলিস্নশ জন অপহরণ ও বহু নিরীহ গ্রামবাসী নির্যাতনের শিকার
হয়েছেন।
তিনি পিডিসি প্রকল্পের
ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ইউএনডিপি কর্তৃক বরাদ্দকৃত উক্ত
অর্থ গ্রামের জনগণের উন্নয়নের জন্য। পিডিসিকে দেয়া হয় চার লক্ষ টাকা ও পিএনডিসিকে দেয়া
হয় দুই লক্ষ টাকা। কিন্তু এই সামান্য অনুদান থেকে যদি একটি মোটা অংক বোরকা সন্ত্রাসীদের
দিতে হয়, তাহলে বাকি টাকা দিয়ে কার্যত কোন ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে
না। ইতিমধ্যে সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি দেখিয়ে যতীন্দ্র কার্বারী পাড়া, শুকনাছড়ি মোনতলা পাড়া,
দেওয়ান পাড়া, বাদী পাড়া, তনুরাম পাড়া-গরমছড়ি, শিলাছড়ি, ছোট ধুরুং মুখ পাড়া, তাল্যা
পাড়া ও পেক্কো পাড়ার জন্য ইউএনডিপি কর্তৃক বরাদ্দকৃত অনুদান থেকে মোটা অংকের চাঁদা
আদায় করে নিয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা যেসব প্রকল্পের জন্য ইউএনডিপি অর্থ বরাদ্দ করেছে
সে সব প্রকল্পের ভবিষ্যত এবং এমনকি আমাদের নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে
উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সশস্ত্র
বোরকা পার্টিকে নিষিদ্ধ এবং প্রত্যেক সদস্যকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের
আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা, বোরকা পার্টি কর্তৃক সংঘটিত সমস্ত অপহরণ, খুন-গুম,
মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায়সহ সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত্মপূর্বক ক্ষতিগ্রস্তদের
ক্ষতিপূরণ প্রদানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং পিডিসি ও পিএনডিসির প্রকল্প নির্বিঘ্নে
ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ সহযোগিতা প্রদান করা করার
দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তাল্যা
পাড়া পাড়া উন্নয়ন কমিটির সভাপতি সম্ভু কার্বারী, গরমছড়ি পাড়া উন্নয়ন কমিটির সভাপতি
ননী কুমার চাকমা, কৈলেশ মহাজন পাড়ার পাড়া উন্নয়ন কমিটির ক্যাসিয়ার কুসুমতারা চাকমা,
পেক্কুয়া পাড়ার পাড়া উন্নয়ন কমিটির সভাপতি গুলমনি চাকমা, দক্ষিণ শিলাছড়ি গ্রামের পিডিসি
সভাপতি নন্দী কুমার চাকমা, দেওয়ান পাড়ার পিডিসি সভাপতি সুশীল দেওয়ান, হাজাছড়ি পাড়ার
পিডিসি সভাপতি প্রবিন্দু চাকমা, থলি পাড়া পিডিসি সভাপতি সুইহ্লাপ্রম্ন মার্মা সহ লক্ষীছড়ি
সদর, বর্মাছড়ি ও দুল্যাতলী ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়া উন্নয়ন কমিটির ৪০ জন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত
ছিলেন।