সিএইচটি নিউজ বাংলা,
১০ মার্চ ২০১৩, রবিবার
পূর্ণস্বায়ত্তশাসন
দাবি দিবস উপলক্ষে আজ ১০ মার্চ রবিবার ইউপিডিএফ'র উদ্যোগে খাগড়াছড়িতে “পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের
জন্য ম্যারাথন ২০১৩” অনুষ্ঠিত হয়েছে। পানছড়ি উপজেলার কলেজ গেট থেকে খাগড়াছড়ির
স্বনির্ভর পর্যন্ত্ ২৩ কিলোমিটার রাস্তায় এ ম্যারাথন দৌঁড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
হয়। রিলে ভিত্তিক এ ম্যারাথন দৌঁড় প্রতিযোগিতায় ৮০টি গ্রুপের ২৪০ জন অংশগ্রহণ করে।
সকাল সাড়ে ৮টায় পানছড়ি
কলেজ গেট এলাকায় শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ কবুতর উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যারাথন
দৌঁড় প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন। এ সময় ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক
ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনের পরপরই সকাল
৯টায় ম্যারাথন দৌঁড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। দৌড় চলাকালীন বিভিন্ন স্থানে রাস্তার
পাশে দাঁড়িয়ে শত শত জনতা করতালি দিয়ে প্রতিযোগীদের উৎসাহ যোগায়।
সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে
ম্যারাথনের মূল গন্ত্মব্য স্বনির্ভরে পৌঁছে ১ম স্থান অধিকার করেন রিতেশ ত্রিপুরা ও
তার দল, ১০টা ৩৯ মিনিটে ২য় স্থান অধিকার করেন জীবন কুমার চাকমা ও তার দল এবং ১০টা
৪৩মিনিটে ৩য় স্থান অধিকার করেন রিপেন চাকমা ও তার দল।
প্রতিযোগীতা শেষে
স্বনির্ভর মাঠে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে
সভাপতিত্ব করেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা
ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক প্রদীপন খীসা।
বিজয়ীদের প্রথম
পুরস্কার দেয়া হয় স্বর্ণ পদক ও ত্রিশ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার রৌপ্য পদক ও ১৮
হাজার টাকা এবং তৃতীয় পুরস্কার ব্রোঞ্জ পদক ও ১২ হাজার টাকা। এছাড়া ৫৭জনকে সান্ত্বনা
পুরস্কার হিসেবে সাধারণ ম্যাডেল দেয়া হয়। ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক
রবিশংকর চাকমা বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
পুরস্কার বিতরণী
অনুষ্ঠানে রবি শংকর চাকমা বলেন, 'ম্যারাথনে যেভাবে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে
আনতে হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসনও সেভাবে লড়াই
সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করতে হবে। ১৯৪৭ সালের ভারত-ভাগের সময় থেকে পার্বত্য
চট্টগ্রামে আন্দোলনের ম্যারাথন শুরম্ন হয়। স্নেহ কুমার-ঘনশ্যাম দেওয়ানরা শুরম্ন
করলেও আন্দোলন শেষ করতে পারেননি। তাদের পর জেএসএস নেতৃত্ত্বের ভার নিজের কাঁধে
তুলে নেয়। কিন্তু তারাও আন্দোলনের কিছু পথ পাড়ি দিয়ে চুক্তির পর থেমে যায়। ফলে এখন
অধিকার আদায়ের সংগ্রাম নতুন প্রজন্মের কাঁধে এসে পড়েছে। আর এই নতুন প্রজন্মের
পার্টিই হলো ইউপিডিএফ।'
তিনি আরো বলেন, 'তরুণদের
মধ্যেই রয়েছে অপার সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাকে বাস্ত্ব রূপ দিতে হলে দরকার সচেতন
প্রয়াস, কঠোর পরিশ্রম ও সাধনা।' তিনি তরুণ যুব সমাজকে অতীতের মহান সংগ্রামী ঐতিহ্য
স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাঘের মতো গর্জন করার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগ সরকারের
সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে পার্বত্য জনগণ তাদের ভোট দিলেও তার বিনিময়ে
তারা কিছুই পায়নি। বরং সরকার পাহাড়িদের ওপর বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে
একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করা হলে জনগণের দুর্দশার আর সীমা থাকবে না। তিনি বলেন,
পার্টি ও জনগণ এক মন এক প্রাণ হয়ে লড়াই করলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য
রাখেন পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান
সোনারতন চাকমা, খাগড়াছড়ি পৌর কমিশনার মিলন দেওয়ান মনাঙ ও ইউপিডিএফ পানছড়ি উপজেলা
ইউনিটের সংগঠক প্রতিম চাকমা। এছাড়া মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় নেতা
সচিব চাকমা, উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপনেত্রী কণিকা
দেওয়ান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক সুপ্রীম চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক থুইক্য চিং মারমা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র
পরিষদের সাবেক সভাপতি অংগ্য মারমা।