মঙ্গলবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

পিসিপি-র সমাবেশে হামলাকারী সন্তু লারমা সমর্থিত ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি


সিএইচটি নিউজ বাংলা, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, মঙ্গলবার
সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর সমাবেশে হামলাকারী সন্তু লারমা সমর্থিত ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে।  গত ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার দাবিসহ শিক্ষাসংক্রান্ত ৫ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে সন্তু লারমা সমর্থিত দুই নাম্বারী নামে পরিচিত ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী কর্তৃক হামলার প্রতিবাদে আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ আহ্বায়ক জুপিটার চাকমা। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন চবি শাখার সভাপতি এমএম পারভেজ লেনিন, প্রগতির পরিব্রজক দল(প্রপদ)এর চবি শাখার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, পিসিপি চবি শাখার সদস্য সচিব তরম্নন চাকমা, সুকান্ত চাকমা ও রিটন চাকমা প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের অন্তর্ভূক্ত সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) চবি শাখার সমাবেশের উপর হামলাকে ন্যাক্কারজনক ও ফ্যাসীবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ বলে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন, লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে প্রাণপ্রিয় সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ১৯৮৯ সালের ২০ মে গঠিত হয়। জন্মলগ্ন থেকেই শাসকগোষ্ঠী এই সংগঠনটিকে ভেঙ্গে দেয়ার জন্য শুরু থেকেই তপর ছিল। সে সময় পিসিপি-র নেতৃত্বের দৃঢ়তার কারণে শাসক গোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্র নস্যা হয়ে যায়। অপ্রিয় হলেও এটা সত্য যে, ১৯৯৭ সালে জেএসএস নেতৃত্ব বিশেষত সন্তু লারমা পিসিপিকে তার পকেটের সংগঠনে পরিণত করার জন্য তকালীন শাসকগোষ্ঠীর সাথে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কিন্তু পিসিপি-র নেতৃত্বের দৃঢ়তার সাথে সন্তু লারমা ও সরকারের এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এবং সংগঠনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা আপোষকামী ও সুবিধাবাদী অংশকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে তার আপোষহীন সংগ্রামী ঐতিহ্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়। দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় পিসিপি-র এই ধারা এখনো বলব রয়েছে।

নেতৃবৃন্দ হামলার বর্ণনা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘূ ভাষাভাষী সমূহের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার দাবিসহ ৫ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রাম পিসিপি কয়েক বছর ধরে করে যাচ্ছে ২১ শে ফেব্রুয়ারি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আসলেই পিসিপি নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে এই দাবিদাওয়া বাস্তবায়নের সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০ তারিখ পিসিপি চবি ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে সকালে সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশকে বানচাল করার জন্য সন্তু লারমার সন্ত্রাসীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে সমাবেশে অংশগ্রহণ না করার জন্য নানা রকম হুমকি দিতে থাকে। পরিকল্পনামাফিক তারা সমাবেশের আগের দিন বিভিন্ন এলাকা হতে প্রায় ৫০-৬০ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে আসে এবং ঘটনার দিন তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। সমাবেশে প্রপদ- এর জাহিদ রোকনের সংহতি বক্তব্য চলাকালে তাদের একটি দল মিছিল সহকারে আমাদের সমাবেশের দিকে আসতে থাকে। পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দিলে কিছুদূর গিয়ে তারা আবার এগিয়ে আসতে থাকে, কিছু বুঝার আগেই তারা ধরধর বলে উস্কানিমূলক শেস্নাগান দিয়ে দেশীয় অস্ত্র (গুলতি, রড, হকিস্টিক) সজ্জিত হয়ে আমাদের কর্মীর উপর অতর্কিতভাবে আক্রমণ চালায় এবং কাটাপাহাড়ের দিকে ধাওয়া করে। তখন বিভিন্ন মোড়ে থাকা ও কাটাপাহাড়ের পাদদেশে থাকা অন্যদলগুলো আমাদের কর্মীর উপর আরেকবার চড়া হন। এতে আমাদের কর্মী রবি চাকমা আহত হন।

হামলাকারীদের পরিচয় উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে যাদের চেনা যায় তারা হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অনিল মারমা(৩য় বর্ষ) প্রাচ্য ভাষা, ধনবিকাশ চাকমা(৩য় বর্ষ) প্রাচ্যভাষা, রিটিশ চাকমা(২য় বর্ষ) মাকেটিং, তুর্য তালুকদার(২য় বর্ষ) প্রতিম চাকমা প্রাচ্যভাষা, সুদেব চাকমা প্রাচ্যভাষা, গৌতম চাকমা, বিমল চাকমা সাংবাদিকতা বিভাগ। এছাড়া বাকিদের নাম জানা যায়নি। তারা সবাই ভাড়াকৃত এবং বহিরাগত।

নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, আহতদের রক্ষার্থে পুলিশ এগিয়ে আসলে ছাত্রলীগ নামধারী কিছু দুবৃত্ত ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপি কর্মীদের আশ্রয় না দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয় এবং এর ফলাফল হিসেবে, পুলিশ পিসিপি কর্মীদের উপর নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নিরপরাধ দু’জন কর্মীকে আটক করে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কর্মীর উপর হামলা নতুন নয়। এর আগে লিফলেট বিতরনকালে একবার তারা হামলা করে। এ হামলাগুলো কোনটাই বিছিন্ন ঘটনা নয়। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ মনে করে, সন্তু লারমা জনবিছিন্ন হয়ে ভাতৃঘাতি সংঘত জিইয়ে রাখা এবং গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলনরত ইউপিডিএফকে নির্মূল করার চেষ্টারই ধারাবাহিক একটি অংশ। এই হামলার মধ্য দিয়ে সন্তু লারমা যে ফ্যাসিষ্ট তা আরেকবার উম্মোচন হলো।

সংবাদ সম্মেলন থেকে নেতৃবৃন্দ নিম্নোক্ত দাবিনামা পেশ করেন-
১। হামলার জড়িতদের দুই নাম্বারী পিসিপি নামে পরিচিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও তাদের যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হোক।
২। এ ধরনের হামলা যাতে আর না ঘটে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হোক।
৩। অত্র হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যে অভিয়োগ উত্থাপন করা হয়েছে তা তদন্তপূর্বক দোসী সাব্যস্ত করে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করে বহিষ্কার করা হোক।

সংবাদ সম্মেলন থেকে এই হামলার প্রতিবাদে নিম্মোক্ত কর্মসূচীও গ্রহণ করা হয়-
১। চবি ক্যাম্পাসের সকল প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়ে এই হামলার প্রতিবাদে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা হবে।
২. এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত্মের দাবি জানিয়ে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
৩। চবি ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার দাবি জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে।