সিএইচটি নিউজ বাংলা, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১২,
শুক্রবার
দিঘীনালায় দুই ইউপিডিএফ কর্মীকে হত্যাকারী
সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতারপুর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সন্তু
লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অপসারণের জোর দাবি জানিয়েছে ইউপিডিএফ। আজ ২১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার
খাগড়াছড়ি জেলা সদর সহ বিভিন্ন উপজেলায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে এ দাবি
জানানো হয়।
খাগড়াছড়ির দিঘীনালায় সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র
সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউপিডিএফের দুই কর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে এবং সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক
পরিষদ থেকে অপসারণের দাবিতে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) আজ শুক্রবার
বেলা ২:৩০টায় খাগড়াছড়ি শহরের মহাজন পাড়ার সূর্যশিখা ক্লাবের মাঠ থেকে একটি মিছিল বের
করে। মিছিলটি চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে উপজেলা পরিষদ হয়ে স্বনির্ভর বাজারে
গিয়ে শেষ হয়। মিছিল পরবর্তী সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড
পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ এর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ইউনিটের সংগঠক পুলক চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কণিকা দেওয়ান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি নিকোলাস
চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আপ্রুসি মারমা। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।
বক্তারা ইউপিডিএফের দুই কর্মীকে হত্যার ঘটনায়
নিন্দা জানিয়ে বলেন, সন্তু লারমা আবারো খুনের নেশায় মেতে উঠেছেন। আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারে
বসে তিনি একের পর এক ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীদের হত্যা করে চলেছেন। এ পর্যন্ত দুই শতাধিক
ইউপিডিএফের নেতা-কর্মী ও সমর্থক সন্তু লারমার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন। সন্তু লারমা আঞ্চলিক
পরিষদের বরাদ্দকৃত বাজেট অনিয়ম,
দুর্নীতির মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহ করে পার্বত্য
চট্টগ্রামে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। কিন্তু সরকার সন্তু লারমার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে
জামাই আদর দিয়ে আঞ্চলিক পরিষদে বসিয়ে রেখেছে।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার একদিকে চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে
অন্যদিকে সন্তু লারমাকে দিয়ে ইউপিডিএফ ধ্বংস করার খেলায় লিপ্ত রয়েছে। এ ধরনের চক্রান্ত বন্ধ
করার জন্য বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের
বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা অবিলম্বে ইউপিডিএফের দুই কর্মীকে
হত্যাকারী সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অপসারণ এবং সন্তু গ্রুপ কর্তৃক
হত্যার ঘটনা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি
ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
একই দাবিতে দিঘীনালায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০ টায় ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল
শুরু হয়ে থানা বাজার হয়ে বাস স্টেশন ঘুরে লারমা স্কোয়ারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে
ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর সংগঠক কিশোর চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য
রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক রেমিন চাকমা, দিঘীনালা থানা শাখার সহ সভাপতি জীবন চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
দিঘীনালা থানা শাখার সভাপতি রজেন্টু চাকমা। শান্তবীর চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।
বক্তারা অবিলম্বে ইউপিডিএফের দুই কর্মীকে
হত্যাকারী সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার, সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অপসারণ ও আঞ্চলিক পরিষদের
বরাদ্দ বন্ধের দাবি জানান।
এদিকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স পানছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও
সমাবেশ করেছে। সকাল সাড়ে ১১টায় পানছড়ি কলেজ গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু
হয়ে পানছড়ি সদরের জিয়া স্কোয়ারে গিয়ে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে গণতান্ত্রিক
যুব ফেরামের পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি বরুণ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি বিবর্তন চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক পরম বিকাশ ত্রিপুরা বক্তব্য
রাখেন।
বক্তারা হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের
আওতায় নিয়ে আসা এবং সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অপসারণের দাবি করেন।
এছাড়া রাঙামাটির নান্যাচরেও পাহাড়ি ছাত্র
পরিষদ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। বেলা ২:৩০টায় নান্যাচর উপজেলা সদরের রেস্ট হাউজ মাঠ থেকে একটি
বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নান্যাচর বাজার প্রদক্ষিণ করে আবার রেস্ট হাউজ মাঠে এসে শেষ
হয়। মিছিল শেষে সেখানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বাবলু চাকমা ও দপ্তর সম্পাদক তাপুমনি চাকমা বক্তব্য
রাখেন। সুকেন চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।
উল্লেখ্য, গতকাল ২০ সেপ্টেম্বর
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জেএসএসের সন্তু গ্রুপের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী দিঘীনালা
উপজেলার কামক্যা ছড়ায় একটি বাড়িতে ইউপিডিএফ সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। সন্ত্রাসীদের গুলিতে
ইউপিডিএফের দুই সদস্য বৈথাং খিয়াং (১৮) ও রমেশ চাকমা (১৮) ঘটনাস্থলের নিহত হয়।