সিএইচটি নিউজ বাংলা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১২, বুধবার
খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলার কবাখালী ইউনিয়নের
নালকাটা গ্রামে গতকাল মঙ্গলবার সেটলার মো: আজহার কর্তৃক এক পাহাড়ি নারীকে (২৫) ধর্ষণের
প্রতিবাদে ও ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন
জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দিঘীনালা উপজেলায় আগামীকাল ২০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল -সন্ধ্যা
সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
আজ ১৯ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ি
ছাত্র পরিষদের যৌথ উদ্যোগে খাগড়াছড়ির শহরের স্বনির্ভর বাজার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল
শুরু হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ারে গিয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। মিছিলে খাগড়াছড়ি সরকারী
কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও যোগ দেয়। চেঙ্গী স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হিল
উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক শিখা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি নারীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, ধর্ষণ,
খুনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ না করাই এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটছে বলে বক্তারা
অভিযোগ করেন। তারা বলেন,
ঘটনার পর দিঘীনালা থানায় ধর্ষিতার স্বামী
বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এখনো ধর্ষণকারীকে
গ্রেফতার করেনি।
বক্তারা আরো বলেন, পাহাড়ি নারীরা আজ কোথাও নিরাপদ নয়। নিজ বাড়িতেও তারা নিরাপদে
থাকতে পারছে না। পানি আনতে গেলে তারা ধর্ষিত হচ্ছে, লাকড়ি আনতে গেলে তারা ধর্ষিত হচ্ছে, গরু চরাতে গেলে ধর্ষিত হচ্ছে। সরকার- প্রশাসন পাহাড়ি
নারীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পুর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থা আর কিছুতেই
মেনে নেয়া যায় না। এ সকল নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারীদেরকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে
হবে।
বক্তারা নারী নির্যাতন সহ সকল ধরনের নির্যাতনের
বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নারী সমাজ ও ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা অবিলম্বে ধর্ষণকারী মো: আজহারকে গ্রেফতারপূর্বক
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, ধর্ষিতার সুচিকিৎসা ও যথোপযুক্ত তিপুরণের দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে আবারো বিক্ষোভ মিছিলটি স্বনির্ভর
বাজারে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।
এদিকে একই ঘটনার প্রতিবাদে ও একই দাবিতে দিঘীনালায়ও
বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ
ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে আজ সকাল ১০ টায় ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি
বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে থানা বাজার প্রদক্ষিণ করে বাস স্টেশন ঘুরে লার্মা স্কোয়ারে
গিয়ে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ডেইজী চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স
ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর দিঘীনালা ইউনিটের সংগঠক কিশোর চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী মেমোরি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা জীবন চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
দিঘীনালা কলেজ শাখার সভাপতি অংকন চাকমা। বিজয় চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।
সমাবেশ থেকে ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে
আগামীকাল ২০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিঘীনালা উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও মহালছড়ি এবং গুইমারায় বিক্ষোভ মিছিল
অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১১টায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উদ্যোগে মহালছড়ি কলেজ প্রাঙ্গন
থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে মহালছড়ি উপজেলা পরিষদ মাঠে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে সেখানে
অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মহালছড়ি উপজেলা শাখার
সভাপতি ঊষাময় খীসা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মহালছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রতন
স্মৃতি চাকমা।
অন্যদিকে দুপুর ১:৩০টার সময় গুইমারা থানার
সড়ক ও জনপদ বিভাগের মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে গুইমারা বাজার প্রদক্ষিণ
করে গুইমারা উচ্চ বিদ্যালয় গেটে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল পরবর্তী সেখানে
অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক
পঞ্চসেন ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার সভাপতি সুমন্ত
ত্রিপুরা ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবীর ত্রিপুরা। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
মাটিরাঙ্গা থানা শাখার দপ্তর সম্পাদক চিত্রজ্যোতি চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।
বক্তারা অবিলম্বে ধর্ষণকারী মো: আজহারকে গ্রেফতার
ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য গতকাল ১৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুর
২টার দিকে বাড়ির পাশ্ববর্তী টিলায় গরু আনতে গেলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা একই ইউনিয়নের
উত্তর মিলনপুর গ্রামের মো: গফুর আলী পিসির ছেলে মো: আজহার(২৫) পিছন দিক থেকে গিয়ে ঐ
নারীকে হঠাৎ ঝাপটে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে অজ্ঞান
অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে তার স্বামী অজ্ঞান অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে। তাকে প্রথমে দিঘীনালা
উপজেলা হাসপাতালে ও পরে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।