সিএইচটি নিউজ বাংলা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১২,
রবিবার
রাঙামাটি শহরে গতকাল শনিবার পাহাড়িদের ওপর
বাঙালিদের পরিকল্পিত হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির কুদুকছড়ি ও কাউখালিতে
বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে রাঙামাটির নান্যাচরে ইউপিডিএফ ভুক্ত সংগঠনগুলো প্রতিবাদ
সমাবেশ করতে চাইলে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। বর্তমানে নান্যাচর
উপজেলা সদর, টিএন্ডটি ও নান্যাচর বাজারে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে
আজ ২৩ সেপ্টেম্বর রবিবার সকাল ১১টায় খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলটি স্বনির্ভর
বাজার থেকে শুরু হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে শান্তি নিকেতন, নারাঙহিয়া হয়ে আবার স্বনির্ভর বাজারে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল পরবর্তী সেখানে
অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর
খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক রিকো চাকমা,
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি
কণিকা দেওয়ান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য জিকো ত্রিপুরা ও পাহাড়ি
ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক থুইক্যচিং মরমা। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রদেব চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।
রাঙামাটির ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত আখ্যায়িত
করে বক্তারা বলেন, পাহাড়িদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া ও তাদেরকে সব সময় ত্রাসের
মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য করতে ওই হামলা চালানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত
ছবিতে ও বিভিন্ন জনের ধারণকরা ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সামনে সেটলাররা লাঠি হাতে ঘোরাফিরা
করছে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাচ্ছে। তারপরও কেন হামলাকারীদের একজনকেও গ্রেফতার করা হলো না তার জবাব
প্রশাসনকে দিতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর হামলার পরও আজ পর্যন্ত কাউকে তার
জন্য শাস্তি দেয়া হয়নি, বিচারের মুখোমুখি পর্যন্ত করা হয়নি। এ কারণে সেটলার বাঙালিদের
উগ্রসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠিটি বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস পাচ্ছে। বক্তারা অবিলম্বে হামলাকারীদের
বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সন্তু লারমাকে রাঙামাটিতে
হামলার প্রতিবাদে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জেএসএস সন্তু গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান উষাতন তালুকদার কয়েক দিন
আগে নিজেই আঞ্চলিক পরিষদকে নিধিরাম সর্দার আখ্যায়িত করেছেন; তাই তাদের উচিত সেখান থেকে পদত্যাগ করা।
এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি এবং রাঙামাটি
জেলার কুদুকছড়ি ও কাউখালিতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নান্যাচরে ইউপিডিএফ
ভুক্ত তিন সংগঠন সমাবেশ করতে চাইলে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে বাধা দেয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নান্যাচর থানা শাখার
সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা নান্যাচরে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারির ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে
বলেন, সেনাবাহিনীর হস্তেেপ প্রশাসন বিনা কারণে ১৪৪ ধারা জারি করে বিক্ষোভ
মিছিলে বাধা প্রদান করেছে। এটা গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই
নয়।
কুদুকছড়ি বড় মহাপুরম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান
ফটকের সামনে থেকে দুপুর ১টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কুদুকছড়ি বাজার প্রদক্ষিণ করে আবার বিদ্যালয়ের
প্রধান ফটকের সামনে এসে এক সমাবেশে মিলিত হয়। গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের
কেন্দ্রীয় সদস্য সোনামনি চাকমা,
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি বিলাস
চাকমা ও দপ্তর সম্পাদক তাপুমনি চাকমা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। কুদুকছড়ি ক্যাম্পের
সেনারা সমাবেশে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে।
অপরদিকে, কাউখালি সদরে প্রশাসন
সমাবেশ করতে দেয়নি। সেখানে বিপুল সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে সদর থেকে কিছুটা
দূরে পানছড়ি, বেতবুনিয়া ও চেলাছড়ায় বিকেলের দিকে সমাবেশ করার কথা রয়েছে।