মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পিসিপি নেতার ওপর সন্ত্রাসী হামলা

সিএইচটি নিউজ বাংলা, ১২ জুলাই ২০১১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা সোহেল চাকমার ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে৷ মাথায় আঘাত পেয়ে বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

আজ রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে৷ জানা যায়, নব গঠিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সিমন চাকমা ও সদস্য সোহেল প্যাগোডার কাছে রাস্তায় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিরুদ্ধে তাদের প্রকাশিত একটি লিফলেট বিলি করছিলেন। এমন সময় সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র অজিত চাকমার নেতৃত্বে ৬-৭ জনের ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী তাদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়৷ এতে নাট্যকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চবি শাখার সদস্য সোহেল চাকমা মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। সোহেল চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ির খবংপুজ্যা। হামলাকারীরা অজিত চাকমা সন্তু গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক দুই নাম্বারী পিসিপির চবি কমিটির সভাপতি বলে জানা গেছে।

হামলাকারীরা তাদের কাছ থেকে লিফলেটগুলো জোরপূর্বক কেড়ে নেয়।

হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজন বহিরাগত রয়েছে বলে জানা গেছে৷ উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে সিমন চাকমার ওপর হামলার সময়ও ওই বহিরাগতরা জড়িত ছিল

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সিমন চাকমা উক্ত সন্ত্রাসী ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা অবিলম্বে হামলাকারী ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

পিসিপির লিফলেট:

ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান:
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে ছাত্র সমাজ জেগে উঠুন

চাপিয়ে দেয়া বাঙালি জাতীয়তা প্রত্যাখ্যান করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ুন

সংগ্রামী ছাত্র সমাজ
নবগঠিত বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার প থেকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন৷ আপনারা নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন যে
, গত ৮ই জুলাই ২০১১ অনুষ্ঠিত এক ছাত্র সমাবেশের মাধ্যমে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখা কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ কমিটিদ্বয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মহানগরে পাহাড়ি ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন জোরদার করতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে৷

আপনারা জানেন, গত ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস করা হয়েছে৷ উক্ত সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতির জনগণের অস্তিত্বকে কেবল অস্বীকার করা হয়েছে তাই নয়, তাদেরকে বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ অর্থাত্‍ এদেশে বাঙালি ছাড়া অন্যান্য জাতিগুলোকে বাঙালি জাতীয়তার মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে হবে৷ এবার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতির জনগণ বাঙালি বলে পরিচয় দিতে বাধ্য হবে৷ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, চাকুরীতে নিয়োগ, সনদপত্র, জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যুর সনদ, পাসপোর্ট গ্রহণ, বিদেশভ্রমণ ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে অবাঙালি জাতির জনগণকে বাঙালি বলে পরিচয় দিতে হবে৷ এক কথায়, পঞ্চদশ সংশোধীর মাধ্যমে সংখ্যালঘু জাতিগুলো সাংবিধানিকভাবে অস্তিত্বহীন হয়ে থাকবে৷ আর যারা অস্তিত্বহীন তাদেরকে অধিকার দেয়ার প্রশ্নই আসে না৷

এছাড়া সংবিধানে বিস্মিল্লাহ্ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে অন্যান্য ধর্মাবলাম্বীদের স্থায়ীভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের মহান আত্মত্যাগ ও অবদানকে সম্পূর্ণ অস্বীকার এবং ৩৮ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকদের সংগঠনের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে৷

এ কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এই বিতর্কিত ও গণবিরোধী সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রত্যাখ্যান করেছে৷ পাহাড়ি ছাত্র সমাজ তথা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চ.বি. শাখা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখা সংবিধানের এই পঞ্চদশ সংশোধনী কখনোই মেনে নেব না৷

প্রিয় ছাত্রছাত্রীবৃন্দ,
জাতীয় সংসদে উক্ত বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের পর পরই চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রতিবাদ হওয়া উচিত ছিল৷ কিন্তু পাহাড়ি ছাত্র সমাজের মধ্যে একটি শক্তিশালী ও লড়াকু সংগঠনের অনুপস্থিতির কারণে সেটা হয়নি৷ কারণ সংগঠন ছাড়া কোন ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলা যায় না৷ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চ.বি. শাখা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখা গঠনের মাধ্যমে সেই শূণ্যতা পূরণ হবে বলে আমরা আশা করি৷

যখন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার পাহাড়ি জাতিগুলোকে নিশ্চিহ্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছে, যখন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ নিপীড়নের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে, যখন সর্বত্র ভুমি বেদখলের মহোত্‍সব চলছে এবং হারানো জমি ফিরে পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, যখন প্রতিনিয়ত আমাদের মা-বোনের ইজ্জত হরণ করা হচ্ছে এবং সর্বোপরি যখন এদেশে নাগরিক হিসেবে আমাদের কোন মান-মর্যাদা নেই, তখন পাহাড়ি ছাত্র সমাজ হাত গুটিয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারে না৷ পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে নির্যাতন নিপীড়ন চলেছে, যেখানে অন্যায় হয়েছে, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সেখানে ছুটে গিয়েছে৷ ভবিষ্যতেও তার কোন ব্যতিক্রম হবে না৷ যেভাবে ১৯৯০ দশকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল, যেভাবে পুরো ছাত্রসমাজ জেগে উঠেছিল, আজ সেভাবে নতুন করে জেগে উঠতে হবে, আন্দোলনের মরা গাঙে জোয়ার নিয়ে আসতে হবে৷ পাহাড়ি ছাত্রসমাজ কোনদিন হার মানবে না৷ তাই আওয়াজ তুলুন:

- অবিলম্বে বিতর্কিত ও গণবিরোধী পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করতে হবে৷
-
চাপিয়ে দেয়া বাঙালি জাতীয়তা মানি না, আমাদের নিজস্ব জাতীয় পরিচয়ে সংবিধানে স্বীকৃতি দিতে হবে৷
-
পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত এলাকা ঘোষণা করতে হবে৷
-
পাহাড়ি জনগণের প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি দিতে হবে৷
-
সেটলারদের সমতলে পুনর্বাসন ও সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নিতে হবে৷

কর্মসূচী:
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও তার সহযোগী পার্টি ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ঢাকা-চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে৷ এসব কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে লাল পতাকা মিছিল ও বিভিন্ন স্থানে লাল পতাকা উত্তোলন (পালিত হয়েছে), থানা ও জেলা সদরে বিক্ষোভ (পালিত হয়েছে), বাঙালি বুদ্ধিজীবীসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্বাক্ষর সংগ্রহ (চলছে), মানববন্ধন (১২ জুলাই), বিশেষ ব্যাজ ধারণ (চলবে) ইত্যাদি৷ এছাড়া আরও নতুন কর্মসূচী যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে৷

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও সংখ্যালঘু জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে চট্টগ্রামেও গণস্বার সংগ্রহ চলছে৷ এতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে৷ বহু বিশিষ্ট প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতা, ছাত্রনেতা, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী ও লেখক ইতিমধ্যে স্বার দিয়েছেন৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীরাও এতে সামিল হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলসহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত পোস্টার সাঁটা হবে৷ পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রামে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের এই আন্দোলনকে আরো জোরদার করতে হবে৷ এসব কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে আপনিও আপনার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করুন৷

১১ জুলাই ২০১১, চট্টগ্রাম

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখা

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখা কর্তৃক যৌথভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত