মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১১

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে তিন পার্বত্য জেলায় একযোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত: বিভিন্ন স্থানে বাধা, লক্ষ্মীছড়িতে বোরখাদের গুলিতে ৩ জন আহত

সিএইচটি নিউজ বাংলা, ১২ জুলাই ২০১১

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে তিন পার্বত্য জেলায় ঘন্টা বাজিয়ে একযোগে এ যাবত কালের সর্ববৃহত্‍ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)৷ আজ ১২ জুলাই, মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়৷ খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, রাঙামাটির ঘাগড়া ও বান্দরবানে বাধাদান সত্বেও হাজার হাজার জনতা এতে অংশ নেন। লক্ষ্মীছড়িতে সেনা-সন্তু সমর্থিত বোরখা পার্টির সন্ত্রাসীদের গুলিতে ৩ মানববন্ধনকারী গুরুতর আহত হন৷ তাদের একজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মানববন্ধনটি খাগড়াছড়ি পানছড়ি উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী ধুধুক ছড়া থেকে শুরু হয়ে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়ক হয়ে জেলা সদরের চেঙ্গীস্কোয়ার, জিরোমাইল ঘুরে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়ক হয়ে রাঙামাটি জেলার মানিকছড়ি পর্যন্ত এবং রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার চম্পাতলি থেকে ঘাগড়া হয়ে কাপ্তাই উপজেলার বড়ইছড়ি পর্যন্ত বিসতৃত হয়৷ এতে হাজার হাজার নারী পুরুষ অংশ গ্রহণ করে। বান্দরবানে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসন তাতে বাধা দেয়। ফলে বালাঘাটায় ইউপিডিএফ-এর কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়৷ এছাড়া একই সময়ে খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা থেকে বাবুছড়া সড়ক, মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুইমারা থেকে বাল্যাছড়ি, আলুটিলা ও লক্ষ্মীছড়ির বিভিন্ন সড়কে এবং রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার জারুলছড়ি থেকে করঙাতলী বাজার, কাট্টলী থেকে বারিবিন্দু ঘাট, বারিবিন্দু ঘাট থেকে বিডিআর গেট হয়ে দিঘীনালা উপজেলা সদর পর্যন্ত, রাজস্থলী সদরসহ বিভিন্ন রাস্তায় এবং সাজেকে মাইনি ব্রিজ থেকে শুকনাছড়ি পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মানববন্ধনে এলাকার সর্বস্তরের জনগণ স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন৷ এ সময় "আমরা বাঙালি নই, আমাদের জাতিসত্তার স্বীকৃতি চাই, চাপিয়ে দেয়া বাঙালি জাতীয়তা মানি না, মানবো না, অবিলম্বে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল কর"... ইত্যাদি দাবি সম্বলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন ও বিশেষ ব্যাজ পরিধান করা হয়।


মানববন্ধন চলা কালে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের চেঙ্গীস্কোয়ার এলাকায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি রিকো চাকমা
, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কণিকা দেওয়ান, জিরো মাইল ও ফায়ার ব্রিগেড এলাকায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি আপ্রুসি মারমা এবং স্বনির্ভর এলাকায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি উপজেলা ইউনিটের সংগঠনক কালোপ্রিয় চাকমা।

বক্তারা অবিলম্বে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে নিজ জাতীয় পরিচিতির স্বীকৃতি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা, অবিলম্বে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার, সেটলারদের সমতলে পুনর্বাসন ও প্রথাগত ভূমি অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান।

বিভিন্ন স্থানে বাধা, গুলি
মানববন্ধন কর্মসূচী ভণ্ডুল করে দেয়ার জন্য সেনাবাহিনী
, পুলিশ, সন্তু গ্রুপ ও বোরখা পার্টির সদস্যরা বাধা দেয়৷ লক্ষ্মীছড়ির শিলাছড়ি এলাকায় সেনা-সন্তু মদদপুষ্ট বোরখা পার্টির সদস্যরা গুলি চালালে কমপক্ষে ৩ ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। তাদের মধ্যে শিমূল চাকমা নামে ১৭ বছরের এক যুবককে প্রথমে লক্ষ্মীছড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ পরে তাকে চিকিত্‍সার জন্য চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়। তার পেটে ও পাছায় গুলি লাগে৷ তার বাড়ি ১ নং লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়নের কলাছড়ি গ্রামে৷ পিতার নাম শশী কুমার চাকমা। আহত আর একজনের নাম হলো নিউটন বিকাশ চাকমা ওরফে সুজন, বয়স ২২৷ পিতার নাম কুলঙ্গ চাকমা। তার বাড়ি কান্দবপাড়া, বর্মাছড়ি। আহত অপর জনের নাম জানা যায়নি।

এছাড়া বোরখা পার্টির সদস্যরা লক্ষ্মীছড়ি সদরের বান্দরকাবায় ভীতি প্রদর্শনের জন্য ৪ রাউন্ড ফায়ার করে৷ এতে কেউ হতাহত হয়নি৷ বোরখা সন্ত্রাসীরা গত ২ - ৩ দিন ধরে এলাকায় লোকজনকে মানববন্ধন কর্মসূচীতে যোগ না দেওয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল৷ আজ সকাল থেকে তারা লক্ষ্মীছড়ির মরাচেঙে, বাদিপাড়া, শিলাছড়ি ও দেওয়ানপাড়ায় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয়৷ তাদের সহযোগিতার জন্য সেনা ও পুলিশও মোতায়েন করা হয়। তারা যৌথভাবে লোকজনকে মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশ নিতে বাধা দেয়৷ কিন্তু তাদের বাধা উপক্ষা করে লক্ষ্মীছড়ি-বর্মাছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি-মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি-চাইল্যাতলী সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে রাঙামাটির ঘাগড়ায় সন্তু গ্রুপের সদস্যরা সকাল সাড়ে দশটার দিকে ৩টি বোমা ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে এবং লাঠিসোটা নিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়।

বান্দরবানে প্রেস ক্লাবের সামনে ইউপিডিএফ-এর সদস্য-সমর্থকরা মানববন্ধন করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে শতাধিক নারীপুরুষ মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেন।

নিন্দা ও প্রতিবাদ
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা এক বিবৃতিতে মানববন্ধ কর্মসূচিতে বাধাদান ও লক্ষীছড়িতে বোরখা সন্ত্রাসী কর্তৃক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের উপর সশস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ তিনি অবিলম্বে বোরখা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

নতুন কর্মসূচী ঘোষণা
মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে উপরোক্ত দাবিতে আগামী ২০ ও ২১ জুলাই দুইদিন ব্যাপী খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় সড়ক ও নৌপথ অবরোধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া আগামী ১৪ জুলাই পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ডাকা ছাত্র ধর্মঘটের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করা হয়।