খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলার বাবু ছড়ায় ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ অনিমেষ চাকমার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
"যারা দেশ ও জনগণের জন্য জীবন দেন, তাদের মৃত্যু থাই পাহাড়ের চেয়ে ভারি, ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকদের জীবন বেলে হাঁসের পালকের চেয়েও নিকৃষ্ট" এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আজ ২৯ মে রবিবার অনুষ্ঠিত শ্রাদ্ধানুষ্ঠানটি প্রথমে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়৷ সকাল ৯-১১ টা পর্যন্ত এ ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলে। এতে পার্বত্য বৌদ্ধ মিশনের অধ্যক্ষ ও পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি সুমনালংকার মহাস্থবির, সাধনাটিলা বনবিহারের অধ্যক্ষ বুদ্ধবংশ স্থবির, পানছড়ি অরণ্য কুটিরের অধ্য শাসন রক্ষিত ভান্তে সহ ৫০ জনের অধিক ভিক্ষু অংশগ্রহণ করেন। সুমনালংকার মহাস্থবির, বুদ্ধবংশ স্থবির ও শাসনরক্ষিত ভান্তে এতে ধর্মদেশনা পরিবেশন করেন।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পর শহীদ অনিমেষ চাকমার স্মরণে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি নতুন কুমার চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রীনা দেওয়ান, ইউপিডিএফ-এর বান্দরবান জেলার অন্যতম সংগঠনক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, দিঘীনালা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিয় চাকমা৷ এছাড়া মঞ্চে উপবিস্থ ছিলেন ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সদস্য ধ্রুব জ্যোতি চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠনক প্রদীপন খীসা, দিঘীনালা উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শতরূপা চাকমা, পানছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শান্তি বিকাশ চাকমা, বাবুছড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান পরিতোষ চাকমা, রূপকারী ইউননিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিশ্বজিত্ চাকমা ও পেরাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক বিম্বিসার খীসা। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ-এর দিঘীনালা উপজেলা ইউনিটের অন্যতম সংগঠক উদয় চাকমা ও পরিচালনা করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মিঠুন চাকমা।
সভায় বক্তারা বলেন, অনিমেষ চাকমা ইউপিডিএফ-এর একজন একনিষ্ট ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ছিলেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকে নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে একনিষ্টভাবে দেশ ও জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করে গেছেন। পার্টির জন্ম লগ্ন থেকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন৷ শহীদ হবার আগ পর্যন্ত তিনি আপোষহীন সংগ্রামে অবিচল ছিলেন৷ তিনি ভূমি বেদখল, সেনা নির্যাতন, অন্যায়-অবিচার ও গণবিরোধী সরকারীনীতির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে সব সময় সচেষ্ট ছিলেন। তার শহীদানের ফলে জুম্ম জনগণ একজন সংগ্রামী নেতাকে হারালো৷ পার্টি হারালো একজন একনিষ্ট, যোগ্য ও লড়াকু সহযোদ্ধাকে।
বক্তারা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, অনিমেষ চাকমাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে জেএসএস সন্তু লারমার আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে। তিনি আঞ্চলিক পরিষদের গদিতে বসে একের পর এক ইউপিডিএফ-এর নেতা-কর্মীদের হত্যার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। যা কারোরই কাম্য নয়।
বক্তারা অবিলম্বে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে জুম্ম জনগণের প্রকৃত অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জনগণের কাতারে এসে আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য সন্তু লারমার প্রতি আহ্বান জানান।
স্মরণ সভা থেকে বক্তারা অবিলম্বে অনিমেষ চাকমা সহ ৪ নেতা-কর্মীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সভা শেষে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আগত প্রায় দেড় হাজার জনকে ভাত খাওয়ানো হয়।
উল্লেখ্য যে, গত ২১ মে রাঙামাটি সুবলঙের মিদিঙাছড়িতে সাংগঠনিক কাজে গেলে জেএসএস সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র হামলায় ৩ সদস্য সহ ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা অনিমেষ চাকমা নিহত হন।