"তোমাদের রক্তের দামে আদায় করে নেবো পূর্ণস্বায়ত্তশাসন, আঞ্চলিক পরিষদে খুনীদের দানবীয় উল্লাস শেষ হবেই" এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা অনিমেষ চাকমা সহ ৪ নেতা-কর্মীর স্মরণে আজ ২৫ মে খাগড়াছড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় স্মরণ সভা, শোক মিছিল ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
বিকাল ৫টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভরস্থ ঠিকাদার সমিতি ভবনে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি উপজেলা ইউনিটের সমন্বয়ক কালোপ্রিয় চাকমা। বক্তব্য রাখেন ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি রবিশংকর তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক চিরজ্যোতি চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সোনালী চাকমা, খাগড়াছড়ি মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক দিলীপ কুমার চাকমা, সমাজকর্মী পূর্ণজয় চাকমা, হ্যাপী চাকমা প্রমূখ। সভা পরিচালনা করেন ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা প্রতিনিধি চরণসিং তঞ্চঙ্গ্যা৷ সভা শুরুর আগে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
বক্তরা অনিমেষ চাকমাকে স্মরণ করে বলেন, তিনি ছাত্র জীবন থেকে নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে একনিষ্টভাবে দেশ ও জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করে গেছেন। পার্টির জন্ম লগ্ন থেকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন৷ শহীদ হবার আগ পর্যন্ত তিনি আপোষহীন সংগ্রামে অবিচল ছিলেন৷ তিনি ভূমি বেদখল, সেনা নির্যাতন, অন্যায়-অবিচার ও গণবিরোধী সরকারীনীতির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে সব সময় সচেষ্ট ছিলেন। তার শহীদানের ফলে জুম্ম জনগণ একজন সংগ্রামী নেতাকে হারালো। পার্টি হারালো একজন একনিষ্ট, যোগ্য ও লড়াকু সহযোদ্ধাকে।
বক্তারা আরো বলেন, শহীদ অনিমেষ চাকমা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সহ কেন্দ্রীয় সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে পিসিপি'র মধ্যে সুবিধাবাদীদের তত্পরতা দেখা দিলে তিনি দৃঢ়ভাবে সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সংগঠনকে সুদৃঢ় করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন।
বক্তারা বলেন, আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারে বসে ইউপিডিএফ-এর নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের খুন করতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে সন্তু লারমা আঞ্চলিক পরিষদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। সন্তু লারমা সরকারের ক্রীড়নক হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির খেলায় মেতে উঠেছেন। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আর দালাল ও খুনী সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চায় না।
বক্তারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের গুরুত্বারোপ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের প্রকৃত মুক্তির ল্যে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই-সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।
বক্তারা অবিলম্বে অনিমেষ চাকমা সহ ৪ নেতা-কর্মীকে হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অপসারণের দাবি জানান।
দিঘীনালায় শোক মিছিল ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন
শহীদ নেতা-কর্মীদের স্মরণে বিকাল ৪:৩০ টায় দিঘীনালায় শোক মিছিল ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শোক মিছিলটি দিঘীনালা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে শুরু হয়ে উপজেলা সদর ও দিঘীনালা বাস স্টেশন ঘুরে শহীদ ভরদ্বাস মুনি অস্থায়ী স্মৃতি স্তম্ভের মাঠে গিয়ে শেষ হয়। সেখান অনিমেষ চাকমার জীবনী পড়ে শোনান গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় প্রাক্তন সভাপতি মিঠুন চাকমা।
মিছিলে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি ও ইউপিডিএফ'র দিঘীনালা-বাঘাইছড়ি উপজেলার প্রধান সংগঠক নতুন কুমার চাকমা, দিঘীনালা উপজেলা ইউনিটের সমন্বয়ক সুগত চাকমা ও উদয় চাকমা সহ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন। সংগঠনের নেতা কর্মীরা ছাড়াও মিছিলে ছয় শতাধিক এলাকার সাধারণ জনগণ অংশ নেন। মিছিল শেষে সকলের অংশগ্রহণে বাবুছড়ায় শহীদদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
এছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি, মহালছড়ি এবং রাঙামাটি জেলায় নান্যাচর, কুদুকছড়ি সহ বিভিন্ন জায়গা স্মরণ সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গত ২১ মে শনিবার সকাল ৯টায় রাঙামাটি জেলার সুবলঙের মিদিঙাছড়ি গ্রামে সাংগঠনিক কাজে গেলে ইউপিডিএফ-এর নেতা-কর্মীদের উপর জেএসএস সন্তু লারমার লেলিয়ে দেয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কাপুরুষোচিতভাবে সশস্ত্র হামলা চালায়৷ তারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা অনিমেষ চাকমা সহ ৪ সদস্যকে খুন করে৷