মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

খাগড়াছড়িতে আবারো সাম্প্রদায়িক হামলার চক্রান্ত: বাঙালি যুবকের অপহরণের সাজানো নাটক !

সিএইচটি নিউজ বাংলা, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, মঙ্গলবার

খাগড়াছড়িতে আবারো তাইন্দং ট্রাজেডির মতো পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার পরিকল্পনা অনুসারে মঞ্চস্থ হলো বাঙালি যুবক টমটম চালক মো: আবু তাহেরের(৩৪) অপহরণ নাটক! জেলা শহরের কলেজ পাড়া এলাকার মো: আবু তাহেরের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সু-পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে এ নাটকটি সাজালেও প্রশাসনের তৎপরতায় তা ব্যর্থ হয়ে গেছে। এ ঘটনার প্রধান চরিত্র তাহেরের স্বীকারোক্তিমতে অপর দুই পরিকল্পনাকারীকে আটকের পর পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আটককৃতদের স্বীকারোক্তি মূলে জানা যায়, অপহরণ নাটকের মূল চরিত্র মো: আবু তাহের খাগড়াছড়ি জেলা শহরের কলেজ পাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত মো: আব্দুর রশিদ-এর পুত্র এবং সে পেশায় একজন টমটম(ইজিবাইক) চালক। তাহেরের দারিদ্রতার সুযোগে ঐ এলাকার অপর এক টমটম চালক মনির হোসেন ও এলাকার বখাটে ছেলে মো: হেলা(প্রকাশ পিচ্চি হেলাল) নামেদুই যুবক ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে নাটকের প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব করে। দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত আবু তাহের বাধ্য হয়ে অভিনয়ে সম্মত হয়। অত:পর দুই পরিচালকের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩১ শে জানুয়ারি শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার নিজের টমটমটি জেলা শহরের পর্যটন মোটেল সংলগ্ন অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহারের সামনে রেখে শান্তি পরিবহন যোগে জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় চলে যায়। পরে সে তার শ্যালককে মুঠোফোনে জানায় ৫/৬ জন পাহাড়ি যুবক তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে এবং তারপর তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তার শ্যালকসহ ঘটনার ঐ দুই পরিকল্পনাকারী জেলা শহরে প্রচার করতে থাকে যে, আবু তাহেরকে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে গেছে। মুহুর্তের মধ্যে খবরটি পুলিশ প্রশাসনসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় পুরো জেলায় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ও আতঙ্কের।

এদিকে এ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দিতে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করে।

আবু তাহেরের স্বীকারোক্তি মতে, ঘটনার দিন মাটিরাঙ্গা যাওয়ার পর সে ঐ রাতে হেঁটে হেঁটে তবলছড়ি যায় এবং পরদিন রামগড় উপজেলায় গিয়ে বাজারের সোনালী বোর্ডিং-এ রাত্রিযাপন করে। সবশেষে গত রবিবার সন্ধ্যায় পুনরায় সে মাটিরাঙ্গা উপজেলার নতুন পাড়া এলাকার মহাশ্মশানের পাশে জনৈক আবু কমিশনারের বাড়ির সামনে রাস্তায় এসে শুয়ে পড়ে এবং দুই মোটর সাইকেল আরোহী তাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে খবর পেয়ে মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সঙ্গীয় ফোর্সসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারের সাথে আলোচনা আবু তাহেরকে মাটিরাঙ্গা থানায় নিয়ে যায়। পরে তাকে খাগড়াছড়ি সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। রাতে সেখানে তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পুলিশ জানায়, দুই দিন দুই রাত পর আবু তাহেরকে পাওয়া গেলেও তার চেহারায় কোন অপহরণের ছাপ বা কোন মলিনতা ছিল না। তার শরীরের কেথাও কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়নি। তার গায়ের পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল স্বাভাবিক। এমনকি তার ব্যবহৃত মোবাইলটি ছিল চার্জ পূর্ণ এবং মাথার চুল ছিল চিরুণিসিদ্ধ। এহের পরিস্থিতিতে সন্দেহ ঘনীভূত হলে তার মোবাইলে ব্যবহৃত ২টি সীম ০১৮১৯৫২৭৫৭০ ও ০১৮৩০৮২৯০২৮ এর কললিষ্ট পরীক্ষা করে জানা যায়, অপহৃত হওয়ার পর হতে মো: আবু তাহের বিভিন্ন সময়ে একাধিক লোকজনের সহিত মোবাইলে যোগাযোগ রকষা করেছেন এবং নিকট আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ করেছেন। এর সূত্র ধরে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদে মো: আবু তাহের স্বীকার করেন যে, তাকে কেহ অপহরণ করেনি।

পরে আবু তাহেরের স্বীকারোক্তি মোতাবেক অপহরণ নাটকের দুই পরিকল্পনাকারী মো: মনির ও হেলালকে আটক করে খাগড়াছড়ি সদরদ থানা পুলিশ।

খাগড়াছড়ি জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো: জয়নাল আবেদীন জানান, এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তাইন্দং ট্রাজেডির পুনরাবৃত্তি এবং পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য তারা এ নাটক সাজিয়েছে। ইতিমধ্যে আবু তাহের সহ দুই পরিকল্পনাকারীকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে তার সত্যতা পাওয়া গেছে এবং ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারেও পুলিশি চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।