রাঙামাটি প্রতিনিধি: পার্বত্যাঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে শিক্ষকদের বর্গা
প্রথা বন্ধের নিদের্শ দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন।
আজ শনিবার রাঙ্গামাটি শহীদ আব্দুল আলি
একাডেমী প্রাঙ্গণে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন ও ঝড়ে পড়া শিশুর হার রোধকল্পে
আয়োজিত এক মা সমাবেশে প্রতিমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য এলাকার
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরীরত যে সকল শিক্ষক কর্মস্থলে না গিয়ে ভাড়ায় শিক্ষক
দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের চিহ্নিত করে চাকুরীচ্যুত করতে
পার্বত্য জেলা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ
দিয়ে বলেছেন যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারী চাকুরী পেয়ে নিজে কর্মস্থলে না
গিয়ে ভাড়ার বিনিময়ে অন্যদের কাজ করায় তাদের শিক্ষকতা করার প্রয়োজন নেই।
এই সব বর্গা শিক্ষকতার প্রমান পাওয়া
গেলে সংশ্লিস্ট শিক্ষককে চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদানের নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী
ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় এই ভাড়াটিয়া শিক্ষক প্রথার বিষয়টি
দুঃখজনক।
এই সময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, যারা
যে উপজেলায় শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান তাদের সে উপজেলায় কাজ করতে হবে। এক উপজেলা
থেকে অন্য উপজেলায় শিক্ষক বদলী যাতে না হয় সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন
বিভিন্ন উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারী চাকুরী পাওয়ার সকলে জেলা সদরে বদলী
হয়ে আসতে চায়। এর ফলে সদর উপজেলায় শিক্ষকের শূন্য কোটা থাকেনা ফলে নতুন ভাবে
সদর উপজেলায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়না।
প্রতিমন্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়
গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সর্বদা উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেন সরকারী
চাকুরীজীবি হিসাবে সরকারের দায়িত্ব পালন চাকুরীজীবিদের দায়িত্ব। তিনি প্রতিটি
হরতাল অবরোধের সময় প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়মিত উপস্থিত থাকার
নির্দেশ দেন এবং এ ব্যাপারে সংশ্ল্ষ্টি শিক্ষা কর্মকর্তাদের সজাগ থাকার নির্দেশ
দিয়ে হরতালের দিন অনুপস্থিত থাকার জন্য বেতন কর্তনের নির্দেশ দেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাঙ্গামাটি
পার্বত্য জেলাসহ অপর দুই পার্বত্য জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে আগামী
জুলাই থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৪জন করে শিশিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ দেয়া হবে এবং
প্রত্যেক বিদ্যালয়ে শিশুদের ৭৫ ভাগ উপবৃত্তি নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া পার্বত্য
এলাকার যে সব দূর্গম এলাকায় ৫০ জন ছাত্র নিশ্চিত হলেই সে স্থানে বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী সভায় উপস্থিত
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানান।
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা
কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মা সমাবেশে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল
কুমার চাকমা, প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব রুপন কান্তি শীল,
ফারুক জলিল, মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান, সদর উপজেলা পরিষদের
চেয়ারম্যান হাজী মোঃ মূছা মাতব্বর, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম
রিয়াজ উদ্দিন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমাসহ প্রাথমিক বিদ্যালয়
পরিচালনা কমিটির সভাপতি, বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত মায়েরা মা সমাবেশে বক্তব্য
রাখেন। রাঙ্গামাটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস আয়োজিত মা সমাবেশে ৬টি ইউনিয়নের
২ হাজার মা অংশ নেয়।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন যাবৎ রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয় গুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রেণী শিক্ষকগণ নিজেরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে
পাঠদান না করে স্থানীয় বর্গা শিক্ষকদের মাধ্যমে পাঠদান করায় আর এক্ষেত্রে প্রাপ্তবেতনের
একটি অংশ বর্গা শিক্ষকদের দিয়ে বাকি টাকাটা একেবারে ঘরে বসেই পকেটে পুরেন এক
শ্রেণীর প্রভাবশালী শিক্ষক, যাদের বিশাল একটি অংশ নিয়োগ হয়েছে শুধুমাত্র দলীয়
বিবেচনায়। এই শিক্ষকবৃন্দ রাঙামাটি শহরে থেকে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজস্ব ব্যবসা
বাণিজ্য।