শনিবার, ১৮ মে, ২০১৩

‘সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার না করা পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়নে অন্তরায়’


সিএইচটি নিউজ বাংলা, ১৮ মে ২০১৩, শনিবার
ঢাকা: পার্বত্য এলাকা থেকে অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার না করাকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের অন্যতম অন্তরায় বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

আজ ১৮ মে শনিবার বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন আয়োজিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।


ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকট একটি রাজনৈতিক সংকট। এটি রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা প্রয়োজন। কিন্তু, সামরিক শক্তি দিয়ে এই সংকট নিরসন সম্ভব নয়। সামরিক শক্তির উপস্থিতির কারণে স্থানীয় প্রশাসনের ক্ষমতা খর্ব করা হয় এবং বেশিরভাগ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সামরিক শক্তির নীরবতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ কারণে অপরাধ প্রবণতা আরো উ
সাহিত হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সব সামরিক ক্যাম্প (প্রায় ৫ শতাধিক) প্রত্যাহার করার কথা। কিন্তু, সরকার বলছে ২৪০টি ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো ৭০-৮০টি সামরিক ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাকি সব ক্যাম্প এখনও রয়ে গেছে।

আর ২০০৯ সাল থেকে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা বন্ধ রয়েছে। এই ক্যাম্পগুলো রাখার ক্ষেত্রে সরকার যে সব যুক্তি হাজির করে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি আদিবাসীদের অধিকার হরণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, “আদিবাসীদের অধিকার হরণের জন্য আদিবাসীদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে সরকার।”

মানবাধিকার হরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয়ে একদিন মানবাধিকার নিয়ে কথা বললে- ‘বলা হবে দেশে কোনো মানুষই নেই’ বলেও মন্তব্য করেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক।

আলোচনা সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “সবার অধিকার নিয়ে কথা না বললে একদিন নিজের অধিকার হরণ হয়ে যাবে।” দেশের সক নাগরিককে মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সরকারের উদ্দেশে সুলতানা কামাল বলেন, “অনেক সময় গড়িয়ে গেছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিন, যাতে করে জনগণ আশ্বস্ত হতে পারে যে, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক রয়েছে।”
 
সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, “সাম্প্রতিক পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। ভূমি বেদখল, নারী ও শিশুর শ্লীলতাহানির চেষ্টা, ধর্ষণের পর হত্যা ও সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে।”
 
“আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইস্তেহারে পার্বত্য চুক্তি বাস্তয়নের অঙ্গীকার করেছিল। আমরা আশা করেছিলাম, পাহাড়ে স্থায়ীভাবে শান্তি আসবে। কিন্তু পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সংঘাত ও নৈরাজ্য বেড়েছে। পার্বত্য জেলা পরিষদকে ভূমি ব্যবস্থাপনা, জেলার আইনশৃঙ্খলা, পরিবেশ ও বন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও সরকার নিজের হাতে রেখেছে” বলেন সুলতানা কামাল।
 
ড. স্বপন আদনান বলেন, “পার্বত্য এলাকায় সবচেয়ে বড় দখলদার হচ্ছে বন বিভাগ। তারা প্রায় ২ লাখ একর জমি দখল করেছে। এছাড়া কিছু এনজিও ও বিমান বাহিনীও জমি দখল করেছে।”
 
নারী নেত্রী খুশি কবীর বলেন, “আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিলেও সংবিধানে আদিবাসীদের অস্বীকার করেছে। ‘আদিবাসী’র বদলে বলেছে ‘ক্ষুদ্র ণৃ-গোষ্ঠী’। দেশে ৪০টি ণৃ-গোষ্ঠী থাকলেও তারা ২৭টির কথা বলেছে।”
 
১৯৯৬ সালে অপহৃত কল্পনা চাকমার বিচার আজও না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে খুশি কবীর বলেন, “ওই ঘটনার অপরাধীরা পার পেয়ে যাওয়ায় অন্যরা উ
সাহিত হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানী ড. জাফর ইকবাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের উপদেষ্টা ড. মেঘনাগুহ ঠাকুরতা, কমিশনের সদস্য ড. স্বপন আদনান, ড. ইয়াসমিন হক প্রমুখ।