সিএইচটি নিউজ বাংলা, ২৫
মার্চ ২০১৩, সোমবার
“দেশের সকল আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু জাতি ও ভাষাভাষীর সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিসহ ১৮
দফা দাবিতে” আজ ২৫শে মার্চ সোমবার সকাল ১০.২০টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স
লাউঞ্জে জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এক উম্মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এস সি আলবার্ট
সরেন। এতে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সভাপতি বদরুদ্দীন উমর,
জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ও সিলেট অঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদক
পরিমল সিং বাড়াইক, জাতীয় পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফয়জুল হাকিম, জাতীয় গণফ্রন্টের
সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, প্রবন্ধিক ও সমুদ্র আইন বিশেষজ্ঞ নূর মোহাম্মদ ও বাংলাদেশ লেখক
শিবিরের সম্পাদক হাসিবুর রহমান ও জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের উত্তর বঙ্গের সাংগঠনিক
সম্পাদক ও উর্দুভাষী প্রতিনিধি আশরাফুল হক বাবু। সভা পরিচালনা করেন জাতিসত্তা মুক্তি
সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা।
আলোচনা সভায় এসসি আলবার্ট
সরেন বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে ৭১-এ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে দেশ স্বাধীন
হয়েছে সে লক্ষ্য আজও পর্যন্ত পুরণ হয়নি। আমি একজন শহীদ পরিবারের সন্তান, কিন্তু সরকার
সেই অবদান অস্বীকার করে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাশের মধ্য দিয়ে সংখ্যলঘু জাতিসত্তা জনগণের
উপর বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়েছে, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম করেছে যা মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার পরিপন্থি। ফলে রামুসহ দেশের অন্যান্য স্থানে শান্তিতে বসবাসকারী বৌদ্ধ ধর্মালম্বীসহ
অন্যান্য জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যলঘু জাতিসত্তার উপর ধর্ম রক্ষার নামে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে
হামলা চালানো হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন ৭১ সালে
যে সকল বাঙালি রাজাকার-আলবদর গণহত্যা ও নারী ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করেছিল তাঁরা
জাতীয় পতাকা উড়িয়ে রাষ্ট্রীয় সুবিধা আয়াসে ভোগ করলেও বাংলাদেশে জম্ম গ্রহণকারী উর্দুভাষী
জনগণ মানবেতর জীবন যাপন করছে, তা অবসান হওয়া জরুরী।
আলোচনা সভার অন্যতম আলোচক
ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল-এর সভাপতি বদরুদ্দীন উমর বলেন- দেশের সংখ্যালঘু জাতির অস্তিত্ব
শুধুমাত্র চলমান সময়েই নয়; সেই ১৯৫০ সাল থেকে অস্বীকার করে আসছে। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫০
সালে পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসক-শোসকদের বিরম্নদ্ধে শুধুমাত্র বাঙ্গালিরা আন্দোলন করেননি,
এদেশের সান্তালসহ বিভিন্ন জাতিসত্তার জনগণও করেছে। এযাবৎ
জাতিসত্তার জনগণ সমস্ত দেশে স্বতন্ত্রভাবে আন্দোলন না করতে পারলেও ১৯৭২ সালের পর পার্বত্য
চট্টগ্রামের জাতিসত্তার জনগণ অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এখন একই শ্রেণীগত
অবস্থানের উপরে দাঁড়িয়ে বাঙালিকে বঙালির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। যে আন্দোলনে চাকমা,
মারমা, গারো, সান্তাল ও মনিপুরী বলতে কিছুই থাকবে না, তা হবে শ্রেণীর বিরুদ্ধে শ্রেণী
সংগ্রাম।
৭২ সালের সংবিধানকে ১৫তম
সংশোধনীর মাধ্যমে পায়ে মাড়িয়ে ফেলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠন কোন
বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ আকারে ছোট হলেও তাঁর শক্তি ও সামর্থ
বিশাল বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম
পরিষদের সম্পাদকমন্ডলীর অন্যতম সদস্য ও সিলেট অঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিমল সিং বাড়াইক
বলেন, যে কোন সরকার ÿমতায় আসার পর নিজেদের সুবিধার্থে সংবিধান সংশোধন
করে থাকেন, জাতিসত্তা জনগণের প্রতি কোন প্রকার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তা করা হয় না।
সভায় অন্যান্য সংগঠনের
মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বদেশ চিন্তা সংঘের সহ-সভাপতি হাসান ফকরী, বাংলাদেশের সাম্যবাদী
দলের মফিজুল ইসলাম, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল কালাম, জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম
পরিষদের দপ্তর সম্পাদক ও অনলাইন এ্যাক্টিভিষ্ট ভীমপল সিনহা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের
সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা, মুক্তির মঞ্চের আহ্বায়ক মুঈনুদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ ছাত্র
ফেডারেশনের সভাপতি সামিউল আলম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুমেন চাকমা, হিল উইমেন্স
ফেডারেশনের সহ-সভাপতি নিরূপা চাকমা, বাংলাদেশ ট্রেডইউনিয়ন ফেডারেশনের নেতা জাহাঙ্গীর
ফিরোজ ও রূপগঞ্জে সেনাবাহিনীর ভূমিদস্যুতা বিরোধী আন্দোলনের নেতা শহীদ মোস্তফা জামালের
পিতা রফিকউদ্দিন। এছাড়াও সিলেট, নঁওগা, রাজশাহী অঞ্চলের প্রতিনিধি বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে দেশে সকল আদিবাসী
ও সংখ্যালঘু জাতি ও ভাষাভাষীর সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবীসহ ১৮ দফা দাবীতে বিকাল ২.৪০টায়
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয়
মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি এসসি আলবার্ট সরেন, জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি
মন্ডলীর সদস্য ফয়জুল হাকিম, গণতান্ত্রিক যুব ফোরমোর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইকেল
চাকমা। সভা পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা। সমাবেশ
শেষে একটি মিছিল বিভিন্ন গুররুত্বপূর্ণ প্রদক্ষিণ শেষে পুরান পল্টন মোড়ে এক সংক্ষিপ্ত
সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
----------