সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা
চালু এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহান শিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে
আজ ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের দণি গেট থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে
চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে কলেজ মাঠে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার সভাপতি
বিপুল চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার
দপ্তর সম্পাদক শিখা চাকমা,
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দিঘীনালা কলেজ শাখার
সভাপতি অংকন চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
শাখার সদস্য উলামং মারমা। এছাড়া সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে থুইচিং মারমা ও দীপন
চাকমা বক্তব্য রাখেন। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক
সোনায়ন চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নিজ মাতৃভাষায় শিা লাভের অধিকার সভ্য সমাজের মানুষের একটি মৌলিক
অধিকার। সরকার সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের ভাষাগুলোর বিকাশ ঘটনো দুরের
কথা, বরং সেগুলো ধ্বংস করার জন্য ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে
যাচ্ছে। তাই মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকারসহ নিজ জাতিসত্তার স্বীকৃতি আদায়ের
জন্য ছাত্র সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ কখনই এক জাতির দেশ নয়, এটি একটি বহুজাতি অধ্যুষিত ও বহুভাষিক রাষ্ট্র। বাঙালি জাতি সংখ্যাগরিষ্ঠ
এবং প্রধান জাতি হলেও এদেশে ৪৫টির অধিক সংখ্যালঘু জাতির অস্তিত্ব রয়েছে। '৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ প্রতিটি জাতিই দেশ গড়ার
কাজে ভূমিকা রাখছে। অথচ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে 'বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালী' এই বাক্যাংশ যুক্ত করে বাঙালি ভিন্ন বাংলাদেশের অন্য জাতি ও
ভাষাভাষী জনগণের উপর উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়েছে।
বক্তারা অবিলম্বে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায়
প্রাথমিক শিক্ষা চালু পূর্বক শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি মেনে নেয়া, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের সাংবিধানিক
স্বীকৃতি ও বৈষম্যমূলক শিক্ষা নীতি বাতিলের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
উত্থাপিত ৫ দফা দাবিগুলো হচ্ছে : সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষালাভের অধিকার
নিশ্চত করা, জাতিসত্তার প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য পাঠ্য পুস্তক থেকে বাদ দেয়া, পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের বীরত্বব্যঞ্জক কাহিনী ও সঠিক সংগ্রামী
ইতিহাস স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা, বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তার
সংপ্তি সঠিক তথ্য সম্বলিত পরিচিতিমূলক রচনা বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত
করা, এবং পার্বত্য কোটা বাতিল করে পাহাড়িদের জন্য বিশেষ কোটা চালু
করা।