সিএইচটি নিউজ বাংলা, ১১
মে ২০১৩, শনিবার
খাগড়াছড়ি: শিক্ষাবৃত্তি
প্রদানের মাধ্যমে কমরেড 'রূপক চাকমা স্মৃতি ট্রাস্টে'র যাত্রা শুরু হয়েছে। শহীদ রূপক
চাকমার আন্দোলনের সহপাঠী ও বন্ধুদের উদ্যোগে এ স্মৃতি ট্রাস্ট গঠন করা হয়।
শিক্ষাবৃত্তি প্রদান উপলক্ষে
আজ ৫ মে শনিবার বিকাল ৫টায় খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙখিয়াস্থ শহীদ রূপক চাকমার ভাস্কর্য
চত্বরে কমরেড রূপক চাকমা স্মৃতি ট্রাস্টের উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। গবেষক
সাইদিয়া গুলরুখের উপস্থাপনায় এতে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসা
এবং রূপক চাকমার আন্দোলনের সহপাঠী কবিতা চাকমা, সোনালী চাকমা ও মিন্টু খীসা।
অনন্ত বিহারী খীসা রূপক
চাকমা স্মৃতি ট্রাস্ট গঠনকে একটি ভালো উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ ধরনের মহৎ কাজ পার্বত্য চট্টগ্রামে তেমন একটা দেখা যায় না।
এ ধরনের কাজগুলো আরো বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, রূপক চাকমা
আমার কাছেও খুব ঘনিষ্ট ছিলো। তার মতো নেতৃত্বের
গুণাবলী লোকের সংখ্যা আমাদের সমাজে খুব কমই রয়েছে। তাকে হারিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের
জুম্ম সমাজ ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা একটা বিরাট রত্নকে হারিয়েছি।
তিনি বলেন, রূপক চাকমা
যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে ধারণ করে লড়াই সংগ্রামে নিয়োজিত ছিলেন তার সে উদ্দেশ্যকে সফল
করার জন্য সকলের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। রূপক চাকমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই আমরা
সফলতা অর্জন করতে পারবো।
রূপক চাকমার স্মৃতিচারণ
করে কবিতা চাকমা বলেন, রূপকের অকাল মৃত্যু আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি। আমরা এখনো
ভাবতে পারি না রূপক মারা গেছে। তার অনেক স্মৃতি
এখনো আমাকে উদ্বেলিত করে তোলে।
তিনি বলেন, রূপক চাকমা
একজন আদর্শ মানুষ ছিলেন। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি ধৈর্যের সাথে নিরলসভাবে কাজ করতে
পারতেন। তাঁর এ ধরনের আদর্শিক চেতনা কিছুতেই
শেষ হবার নয়।
সোনালী চাকমা স্মৃতিচারণ
করে বলেন, রূপক চাকমা ছিলেন একজন অন্যরকম মানুষ। সত্যিকারের একজন মানবীয় গুণাবলী সম্পন্ন
মানুষ ছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, রূপক চাকমা ছিলেন আমাদের রাজনৈতিক আদর্শের একজন
শিক্ষক এবং ভালো বন্ধুও।
মিন্টু খীসা বলেন, সত্যিকার অর্থে রূপক ছিলেন একজন প্রকৃত সংগ্রামী ও বিপ্লবী। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো সাহস তার ছিল।
তিনি বলেন, রূপক চাকমা প্রতিটি কাজ অত্যন্ত দক্ষতা, যোগ্যতার সাথে সম্পাদন করতে পারতো। আমাদের সকলের রূপক চাকমার চেতনা লালন করা প্রয়োজন।
মিন্টু খীসা বলেন, সত্যিকার অর্থে রূপক ছিলেন একজন প্রকৃত সংগ্রামী ও বিপ্লবী। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো সাহস তার ছিল।
তিনি বলেন, রূপক চাকমা প্রতিটি কাজ অত্যন্ত দক্ষতা, যোগ্যতার সাথে সম্পাদন করতে পারতো। আমাদের সকলের রূপক চাকমার চেতনা লালন করা প্রয়োজন।
আলোচনা সভা শেষে অপহৃত কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমার মেয়ে হ্যাপী চাকমাকে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান
করা হয়। হ্যাপী চাকমা বাঘাইছড়ি বালিকা উচ্চ
বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে। শহীদ রূপক চাকমার পিতা বিমলেন্দু চাকমা ও মাতা
রঙ্গিলা চাকমা হ্যাপী চাকমার হাতে শিক্ষা বৃত্তির টাকা তুলে দেন।
কমরেড রূপক চাকমা স্মৃতি
ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ২০১৩-১৪ সালের কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-
শিক্ষা বৃত্তি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাধিকার আন্দোলনে সকল শহীদদের স্মৃতির
প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ এবং প্রতি বছর পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক-অর্থনীতির
পর্যালোচনামূলক স্মারক বক্তৃতা আয়োজন করা।
উল্লেখ্য, রূপক চাকমা অষ্টম
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউপিডিএফ প্রার্থী প্রসিত খীসার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে
গিয়ে ২০০১ সালে ২১ সেপ্টেম্বর পুজগাঙ মধুমঙ্গল
পাড়ায় জনসংহতি সমিতির সদস্যদের সশস্ত্র হামলায় নিহত হন। এর আগে তিনি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।